ছাগল–কাণ্ড: গত বছর ঈদে ইফাত এক খামার থেকেই কেনেন ৬টি পশু
১৫ লাখ টাকার ‘উচ্চবংশীয়’ ছাগলকে কেন্দ্র করে এবার ঈদের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন ইফাত।
‘উচ্চবংশীয়’ ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনায় আসা মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত গত বছরও ঈদুল আজহার সময় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ছয়টি পশু কিনেছিলেন। এর মধ্যে ছিল দুটি গরু, দুটি ছাগল ও দুটি ভুট্টি (খর্বাকৃতির গরু)। এই ছয় পশু কিনতে তাঁর খরচ হয়েছিল প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, এই ঈদে সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল (দাম চাওয়া হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা), ১১ লাখ টাকায় একটি গরু এবং দুই লাখ টাকার একটি ভুট্টি কেনার জন্য ১১ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন ইফাত। অগ্রিম দেওয়া টাকার মধ্যে ছাগলের জন্য এক লাখ, গরুর জন্য ৯ লাখ ৫০ হাজার এবং ভুট্টির জন্য ৫০ হাজার টাকা ছিল।
১৫ লাখ টাকায় (প্রাথমিক দর) ‘উচ্চবংশীয়’ ছাগলকে কেন্দ্র করে এবার ঈদের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল (ছড়িয়ে পড়া) হন ইফাত। এর পর থেকে তাঁর বিলাসী জীবনযাপনের নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। ইফাতের বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমান।
তবে ঈদুল আজহার (১৭ জুন) দুই দিন আগে মেসেঞ্জারে সাদিক অ্যাগ্রো কর্তৃপক্ষকে ইফাত জানান, ছাগল নিয়ে তিনি বিপদে পড়েছেন। যে কারণে এবার গরু-ছাগল নেবেন না। অগ্রিম দেওয়া ১১ লাখ টাকার দাবিও তিনি ছেড়ে দিয়েছেন।
ইফাতের বায়না করা গরু-ছাগল বিক্রি করা হয়নি বলে সাদিক অ্যাগ্রো কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানিয়েছে।
১৫ লাখ টাকায় (প্রাথমিক দর) ‘উচ্চবংশীয়’ ছাগলকে কেন্দ্র করে এবার ঈদের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল (ছড়িয়ে পড়া) হন ইফাত। এর পর থেকে তাঁর বিলাসী জীবনযাপনের নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। ইফাতের বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমান।
একজন সরকারি চাকরিজীবীর কলেজপড়ুয়া ছেলে কীভাবে এত বিলাসী জীবনযাপন করতে পারেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইফাতের বাবা তাৎক্ষণিকভাবে ছেলের পরিচয়ও এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
ইফাতের বাবা মতিউর রহমান এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালেরও প্রেসিডেন্ট। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ারের বড় ব্যবসায়ী তিনি। বিষয়টি তিনি নিজেও অস্বীকার করেননি।
তবে ইফাতের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বলছেন, ইফাতের মা শাম্মী আখতার ওরফে শিবু মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। শাম্মীর বাবার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। শাম্মী ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য (ফেনী-২) নিজাম উদ্দীন হাজারীর আত্মীয়।
ইফাতের বাবা মতিউর রহমান এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালেরও প্রেসিডেন্ট। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ারের বড় ব্যবসায়ী তিনি। বিষয়টি তিনি নিজেও অস্বীকার করেননি। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে (১৯ জুন প্রচারিত) এক সাক্ষাৎকারে মতিউর রহমান বলেছেন, তিনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ওই কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে কম দামে কিনে নিয়ে পরে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে অনেক মুনাফা করেছেন।
সাদিক অ্যাগ্রোর কাছে ইফাত সেই গরুর দাম ৭ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। তবে সাদিক অ্যাগ্রো ৬ লাখ টাকা বলেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে সমঝোতা হয়নি।
গরুর বিনিময়ে ছাগল নিতে চেয়েছিলেন ইফাত
এবার ঈদের আগে সাদিক অ্যাগ্রো ছাড়াও বিভিন্ন খামার থেকে কোরবানির পশু কিনেছেন ইফাত। এর মধ্যে রাজধানীর রামপুরার সামারাই অ্যাগ্রো নামের একটি খামার থেকে ঈদের তিন মাস আগে ৮ লাখ টাকা দিয়ে একটি গরু কেনেন তিনি। এই খামার থেকে আরও একটি গরু ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনার কথা থাকলেও পরে তা নেননি ইফাত।
সামারাই অ্যাগ্রোর মালিক মো. নিলয় হোসেন গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ৮ লাখ টাকা দিয়ে কেনা সেই গরু তিন মাস আগে নিয়ে গেছেন ইফাত। তখন তিনি বলেছিলেন, মোহাম্মদপুরে তাঁর এক বন্ধুর খামার আছে, সেখানে রাখবেন। পরে শুনেছেন, সেই গরুর বিনিময়ে ছাগল কিনতে চেয়েছিলেন ইফাত।
৮ লাখ টাকায় কেনা গরু ঈদের ১০–১২ দিন আগে সাদিক অ্যাগ্রোর খামার বিক্রির জন্য নিয়ে যান ইফাত। এ বিষয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইফাত বলেছিলেন, ছাগলের টাকা জোগাড় করতে একটু কষ্ট হচ্ছে। এই গরুর একটা দাম ধরে রেখে দেন। বাকি টাকা দিচ্ছি।’
সাদিক অ্যাগ্রোর কাছে ইফাত সেই গরুর দাম ৭ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। তবে সাদিক অ্যাগ্রো ৬ লাখ টাকা বলেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে সমঝোতা হয়নি।
ঈদের সময় বিভিন্ন খামার থেকে দামি গরু–ছাগল কেনার টাকার উৎস কী, তা জানতে গতকাল বিকেল থেকে ইফাতের মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। তবে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিভিন্ন খামার থেকে গরু কিনতেন তিনি
সাদিক ও সামারাই অ্যাগ্রোর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দামি গরু কেনার বিষয়ে ইফাতের আগ্রহ রয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রাণিসম্পদ মেলায় ‘হাম্বা পাগলা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্মে’ গরু কিনতে যান ইফাত। একটি গরু কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধও হয়েছিলেন তিনি। পরে সেই গরু আর কেনেননি বলে জানান ওই ফার্মের মালিক কামরুল হাসান।
এই ঈদে রাজধানীর রাহমাহ ক্যাটেল ফার্ম থেকেও কোরবানির জন্য তিন লাখ টাকায় একটি গরু কিনেছেন ইফাত। এ ছাড়া সারা অ্যাগ্রো থেকেও তিনি গরু কিনেছেন বলে জানা গেছে।
সারা অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপক আবদুল বাতেন গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছ থেকে ইফাত এবার কোনো গরু কিনেছেন কি না, তা কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। তবে গত বছর তাঁদের খামার থেকে ইফাত গরু কিনেছিলেন বলে জানান তিনি।