চমেকে ডায়ালাইসিস ফি বাড়ায় বিক্ষোভ
জহিরুল ইসলাম (৩৪) একসময় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। কিডনি–সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পাঁচ বছর ধরে ডায়ালাইসিস করছেন। প্রথমদিকে বেসরকারি হাসপাতালে করলেও এখন আর সেই সামর্থ্য নেই। দুই বছর ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিচতলায় স্যানডোর ডায়ালাইসিস প্রতিষ্ঠানে সেবা নিচ্ছেন। কিন্তু এত দিন ৫১০ টাকা দিয়ে যে ডায়ালাইসিস তিনি নিয়েছিলেন, তা এখন ২ হাজার ৯৩৫ টাকায় করতে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন জহিরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নীলু বেগম।
এভাবে ফি বাড়ানো ও ভর্তুকির ডায়ালাইসিস সেশন কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে রোগী ও স্বজনেরা আজ রোববার হাসপাতালের নিচতলায় স্যানডোরের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। স্যানডোর এত দিন দুটি মূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা দিত। এর মধ্যে ভর্তুকির যে সেবা দিত, তার মূল্য ছিল ৫১০ টাকা। তা বেড়ে এখন ৫৩৫ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া ভর্তুকি বাদে ২ হাজার ৭৮৫ টাকায় যে ডায়ালাইসিস সেশন চালাত, তা বেড়ে করা হয়েছে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা।
আবার এত দিন যাঁরা মাসে আটটি সেশন ভর্তুকি মূল্যে ডায়ালাইসিস করাতে পারতেন, তাঁদের এখন থেকে অর্ধেক পুরো ফিতে করতে হবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ কারণে রোগী ও স্বজনেরা গতকাল শনিবার থেকে আগের ফি ও ভর্তুকি সেশন আগের মতোই বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আজ তা বিক্ষোভে রূপ নেয়। রোগী ও স্বজনেরা বলেন, ‘হঠাৎ ভর্তুকি কমিয়ে দিলে আমাদের প্রতি অবিচার হবে।’
জহিরুলের স্ত্রী নীলু বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তাঁদের এক মেয়ে। স্বামীর এখন কোনো আয়রোজগার নেই। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে তাঁদের বাড়ি। সেখান থেকে কিছু সাহায্য– সহযোগিতা পান স্বামীর চিকিৎসার জন্য। বাকিটা নিজে অন্যের বাড়িতে কাজ করে পুষিয়ে নিতেন। কিন্তু এখন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা তাঁরা।
নীলু বেগম বলেন, ‘এত দিন প্রতিটি ডায়ালাইসিস ৫১০ টাকা করে করাতে পারতাম। জানুয়ারি থেকে মাসে ৪টা ডায়ালাইসিস ৫৩৫ টাকায় এবং বাকি চারটা ২ হাজার ৯৩৫ টাকায় করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। এত টাকা কোথায় পাব, বুঝতে পারছি না। এভাবে হলে ডায়ালাইসিস না করে মরে যেতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্যানডোরের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন চট্টগ্রামে বছরে সাড়ে ছয় হাজার রোগীকে ভর্তুকির সেবা দেওয়া হতো। এ টাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের পরিশোধ করে থাকে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সাড়ে ছয় হাজারের চেয়ে তা বেড়ে দ্বিগুণ বা তিন গুণ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ হয়তো এ চাপ কমানোর জন্য অর্ধেক ভর্তুকির অর্ধেক পুরো ফিতে করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকতে পারে। এটা আমাদের কোনো বিষয় নয়। আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, সাড়ে ছয় হাজার জনের ভর্তুকিতে ডায়ালাইসিস করানোর কথা রয়েছে। সব কটি সেশন ভর্তুকি না দিয়ে অর্ধেক ভর্তুকির সেবা নিতে বলায় রোগীরা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। ভর্তুকি আরও বাড়ানো যায় কি না, তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত কী আসে দেখি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের কিডনি রোগীদের জন্য ২০১৭ সালের ৫ মার্চ ৩১টি মেশিন নিয়ে চমেক হাসপাতালের নিচতলায় কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারটি চালু হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বহুজাতিক কোম্পানি স্যানডোর এ সেন্টারে তাদের কার্যক্রম ১০ বছর চালিয়ে যাবে।