ঢাকা ওয়াসায় তাকসিম এ খানের যত ‘সফলতা’-প্রতিবেদনের প্রতিবাদ
প্রথম আলো অনলাইনে গত ২৯ জুলাইয়ে প্রকাশিত ‘ঢাকা ওয়াসায় তাকসিম এ খানের যত ‘‘সফলতা’” শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। প্রতিবাদে বলা হয়েছে, শিরোনামসহ প্রকাশিত সংবাদটি মনগড়া এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন খাতে ঢাকা ওয়াসার অর্জনকে বাঁকা চোখে দেখে প্রণীত বলে ঢাকা ওয়াসা মনে করে।
ঢাকা ওয়াসার উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক স্বাক্ষরিত প্রতিবাদটি পাঠানো হয়েছে গত ৩০ জুলাই। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার যে তিনটি দায়িত্বের বিষয়ে প্রতিবেদনে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা মোটেও সত্য নয়। ঢাকা ওয়াসার ম্যান্ডেট অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ঢাকা ওয়াসার ওপর ন্যস্ত, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নয়।
প্রতিবেদনে ড্রেনেজের ব্যর্থতার বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মনগড়া প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাকা ওয়াসা। তাদের প্রতিবাদে আরও বলা হয়েছে, ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার (জলাবদ্ধতা নিরসন) দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসাকে অর্পণ করে। ...ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে আধুনিক করার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়, যেখানে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা কারিগরি বিষয়াদিসহ মহানগরের সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনের নিকট অর্পণের সুপারিশ করে। ওই সুপারিশ অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা থেকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরে বারবার অনুরোধ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ড্রেনেজের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অথচ প্রতিবেদনটিতে বলা হয় যে জলাবদ্ধতা নিরসনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়াতেই এই দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এটি সত্যের অপলাপ মাত্র।
প্রতিবাদে আরও বলা হয়, মহানগরের পয়োব্যবস্থাকে আধুনিক করতে ২০১৪ সালে পয়োবর্জ্য মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এর আওতায় ঢাকা ওয়াসা ‘দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার’ নামে একটি বৃহৎ পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করেছে। আরও তিনটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের কার্যক্রম চলমান আছে। এ ছাড়া ভূ–উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দিষ্টসংখ্যক পানিশোধনাগার নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান আছে। সায়েদাবাদ ও পদ্মা পানিশোধনাগার প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই শোধনাগার থেকে প্রায় ৩৪ শতাংশ পানি উৎপাদিত হচ্ছে। নির্মাণাধীন দুটি শোধনাগারের কাজ শেষ হলে এটা ৭০ শতাংশে দাঁড়াবে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য:
ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার দায়িত্ব ছিল ওয়াসার কাছে। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ড্রেনেজের দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদনেও ড্রেনেজের দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়টি বলা হয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে পয়োব্যবস্থাপনা নিয়ে যেসব ঘাটতির বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে ওয়াসার প্রতিবাদে কিছু বলা হয়নি। আর দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার পর্যন্ত পয়োবর্জ্য পৌঁছানোর নেটওয়ার্কই তৈরি হয়নি। ফলে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্প থেকে কোনো সুফল নগরবাসী পাচ্ছে না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনেও পানির উৎসের বিষয়ে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার পানির উৎস ভূগর্ভস্থ–নির্ভর। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান নিজেই ২০২১ সালের মধ্যে ভূ-উপরিভাগের পানির উৎপাদন অন্তত ৭০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যা সম্ভব হয়নি। আর যে দুটি নির্মাণাধীন প্রকল্পের কথা ওয়াসা বলেছে, সেগুলোর অগ্রগতি খুবই ধীর। কবে নাগাদ এগুলোর কাজ শেষ হবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
এর বাইরে প্রতিবাদে পানি ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসার উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যেগুলোর বিষয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে কিছু লেখা হয়নি।