নোয়াখালীতে নতুন করে বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
নতুন করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এতে নতুন করে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফেরা মানুষগুলো। তাঁদের অনেকেই এরই মধ্যে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। নতুন বৃষ্টিপাতের ফলে যেসব সড়ক ও বাড়িঘর থেকে পানি সরে গেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই আবার ডুবে গেছে। ডুবে গেছে জেলা শহর মাইজদীর বেশির ভাগ সড়কও।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক আজরুল ইসলাম আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি জানান, সাগরে লঘুচাপ এবং মূল ভূখণ্ডে স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও নোয়াখালীতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলার বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে টানা ৯ দিন তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। যদিও বন্যায় আক্রান্ত আটটি উপজেলার অধিকাংশ নিচু এলাকা হাঁটুসমান পানিতে ডুবে ছিল। এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। বাসিন্দারা জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণও বাড়ে। শুক্রবার রাতের বেশির ভাগ সময় এবং আজ সারা দিন বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। ফলে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। যাঁরা পানি কমে আসায় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছেন, তাঁরা পড়েছেন সীমাহীন কষ্ট ও ভোগান্তিতে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় জেলার ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল। গত কয়েক দিন বৃষ্টি না হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি কমতে শুরু করে। এতে অনেক বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যায়। পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা কমে ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ জনে দাঁড়ায়। একইভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার থেকে কমে ৩৫ হাজার ৪৪১ জনে নেমে এসেছিল। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া নতুন বৃষ্টিপাতে সেই সংখ্যা বেড়ে ৩৮ হাজার ২৭১ জনে দাঁড়িয়েছে।
আজ সকালে সরেজমিনে দেখা দেখা গেছে, জেলা শহর মাইজদীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনের সড়কে প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা বিবি খোদেজা প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির উঠানে এখনো কোমরসমান পানি। ঘরের ভেতর হাঁটুপানি। রান্নাঘরের চুলা ডুবে গেছে অনেক আগে। বাইরে থেকে কিনে আনা শুকনা খাবার এবং প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেতে হচ্ছে। শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে।
বন্যার কষ্টের কথা জানালেন জেলা শহরের রশিদ কলোনি এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ঘরের ভেতরে আবার পানি ঢুকেছে। ঘর থেকে বের হলেই হাঁটুসমান পানি। বন্যার পানিতে ঘরের আসবাবপত্রসহ অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে। পানি কমার কারণে যাঁরা এরই মধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন, তাঁরা নতুন করে সংকটে পড়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যাঁরা পুনরায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চান, তাঁদের আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তিন হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।