আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় ইইউ  

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বাংলাদেশে ইইউর হেড অব ডেলিগেশন চার্লস হোয়াইটলি এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক মন্তব্যে তাঁরা খুশি।

আজ বুধবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে চার্লস হোয়াইটলি এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাই একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।

অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন প্রত্যাশিত মাত্রায় অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক মতবিরোধের সুরাহা করতে হবে। এ কাজ রাজনৈতিক নেতাদেরই করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা এবং কিছু বড় বিষয়ে সমঝোতার প্রয়োজন আছে।

গত বছরের জুলাইয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছিল ইইউ। বিষয়টি উল্লেখ করে চার্লস হোয়াইটলি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কমিশনের সঙ্গে তাঁদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তাঁরা নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং গত বৈঠকের পর অগ্রগতি সম্পর্কে জেনেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে চার্লস হোয়াইটলি জানান, তাঁরা মূলত নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে এসেছিলেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে চার্লস হোয়াইটলি বলেন, সবাই একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে কোনো সুপারিশ করেননি। নির্বাচন কমিশন তাদের কাজ করবে।

এর আগে চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদল মূলত নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। তাদের ভোটার তালিকা (ইলেকটোরাল রোল), সংসদীয় আসনের সীমা পুনর্নির্ধারণ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে ইসির কোনো উদ্যোগ আছে কি না, এই বিষয়গুলো তাদের জানানো হয়েছে। ইসি বর্তমান অবস্থানটা পরিষ্কার করেছে এবং জানিয়েছে যে ইসি প্রস্তুত আছে।

রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ এসেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমি যেটা তাঁদের বলেছি, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিকবার বলেছি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন এবং ব্রড ইস্যুতে (বড় বিষয়গুলোতে) তাদের মধ্যে অ্যাগ্রিমেন্টের প্রয়োজন আছে। যাতে নির্বাচনটা সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা বলেছি, এই আবেদন আমরা প্রথম থেকে করে আসছি, এখনো করে যাচ্ছি। যে মতবিরোধ আছে, সেগুলো রাজনৈতিক ইস্যু। এগুলো আমাদের জন্য ইস্যু নয়। কাজেই সেই পলিটিক্যাল ইস্যুগুলো, যেগুলো ইলেকশনের জন্য অন্তরায় হতে পারে, সেগুলোর সুরাহা রাজনৈতিক নেতাদের করতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের সেটা অনুধাবন করতে হবে, বুঝতে হবে। তাঁদেরকেই সেটার নিরাময় করতে হবে। তাহলেই নির্বাচন প্রত্যাশিত মাত্রায় অংশগ্রহণমূলক হবে, সুন্দর ও সুষ্ঠু হবে।’

নিজেদের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কিছু কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো মতপার্থক্য রয়েছে। এই মতপার্থক্য থাকার কারণে নির্বাচনী পরিবেশটা এখনো পুরোপুরি সহায়ক (কনজেনিয়াল) নয়।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা আশা করি যে অচিরেই মতপার্থক্য দূর হয়ে যাবে। শেষমেশ সব দল নির্বাচনে আসবে, আমরা আশাবাদ এ ব্যক্ত করেছি। তবে এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারিনি। আমরা বলেছি, যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, তাহলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।’

সিইসি বলেন, ‘ইভিএম সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়েছিল, যে ইভিএম নিয়ে অবিশ্বাস আছে কি না। বলেছি, ইভিএম নিয়ে যে অবিশ্বাস ছিল, তা অনেকটা কেটে গিয়েছিল। তবে এটাও জানিয়েছি যে ইভিএম নিয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না। কারণ, আদৌ ইভিএম পর্যাপ্ত হবে কি না। কী পরিমাণ নির্বাচন ইভিএমে করতে পারব, এ বিষয়ে কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আমরা উপনীত হইনি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য আগের মতো ইসির পক্ষ থেকে কোনো অন্তরায় থাকবে না। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য ইসির নীতিমালা আছে। তাঁরা আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। কারণ, বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়ভাবে সুরাহা হতে হবে। কিন্তু ইসি এতটুকু বলেছে, ইসির তরফ থেকে কোনো অন্তরায় থাকবে না।