হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় দায়মুক্তি দেওয়া বন্ধের আহ্বান

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

বাংলাদেশে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন ও অন্যান্য খারাপ আচরণের ঘটনায় দায়মুক্তি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, নির্যাতন প্রতিরোধসংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশন অনুসমর্থনকারী দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু প্রতিরোধসংক্রান্ত আইন কার্যকর করেছে। এরপরও গত এক দশকের বেশি সময়ে নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে মাত্র একজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। কারণ, বাংলাদেশে নির্যাতন করেও পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়মুক্তি পাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে ২ জুন। এদিন অভয়নগরে পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান আফরোজা বেগম (৪০) নামের এক নারী। তাঁর বড় ছেলে আরিফ হোসাইন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তাঁর মায়ের শরীরে মাদক রাখতে এবং তাঁকে মারধর করতে দেখেছেন তিনি। এরপর পুলিশ তাঁর মাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। এর ঠিক পরদিন সকালে পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান তাঁর মা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বিপজ্জনকভাবে। দেশটির সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনার খবর আসে। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় ৯২৩ জন মারা গেছেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক পরিচালক তাকবির হুদা বিবৃতিতে বলেছেন, ‘নির্যাতন ও অন্যান্য অমানবিক আচরণ ঘৃণ্য একটি কাজ। এসব কখনো আইনসিদ্ধ হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতনের যে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সেসব অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

তাকবির হুদা আরও বলেন, ‘পাশবিক এসব অপরাধের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুঃখজনক হলেও বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের ন্যায়বিচার পাওয়ার গতি খুব ধীর। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করতে হবে।’