রাজস্ব আয়ের চেয়ে তামাকজনিত চিকিৎসায় সরকারের ব্যয় বেশি: ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে আজ ‘বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণ: সফলতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ছবি: সংগৃহীত

তামাক খাত থেকে সরকার প্রতিবছর যে পরিমাণ কর রাজস্ব পায়, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি তামাকজনিত চিকিৎসায় ব্যয় হয়। এ মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, তামাকে সাত হাজার কেমিক্যাল রয়েছে। যার মধ্যে ন্যূনতম সাত থেকে আটটি উপাদান সরাসরি ক্যানসারের জন্য দায়ী।

‘বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণ: সফলতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। আজ মঙ্গলবার সকালে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে হাসপাতালের সভাকক্ষে এ সেমিনার হয়।

অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ আরও বলেন, তরুণদের তামাকের প্রতি আসক্ত করতে সিগারেট কোম্পানি চালাকি করে সিঙ্গেল স্টিক সিগারেট বিক্রি করছে। যাতে সহজেই তরুণেরা সিগারেট কিনতে পারে। তরুণদের আসক্ত করতে পারলে তারা অনেক দিন ব্যবসা করতে পারবে। তাই বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেমিনারে ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘বিদ্যমান তামাক আইন সংশোধনের ব্যাপারে আমি নিজে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আইন সংশোধনের ব্যাপারে আগ্রহী। আমি ভবিষ্যতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তামাক আইন সংশোধনের ব্যাপারে আবারও বলব।’

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজভী সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ জনপরিসর ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। একই সঙ্গে তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর কারণ বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনো সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় চিকিৎসকেরা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। দেশের মানুষকে তামাকের ভয়বহতা সম্পর্কে সচেতন করতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে বিএমএ।  

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজভী বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ বাড়ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার। তাই এই অকাল মৃত্যু ঠেকাতে অবিলম্বে বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিটিএফকের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডা. মাহিন মালিক, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল টোব্যাকো ব্রাঞ্চের প্রধান ইন্দু আহলুওয়ালিয়া, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তারেক মেহেদী পারভেজ, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, সন্ধানী, প্ল্যাটফর্ম অব ডেন্টাল অ্যান্ড মেডিকেল সোসাইটির প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যম কর্মীরা।