সাগরভাষা, বউভোলানো, জগৎমোহিনীতে মুগ্ধ দর্শক
আমের নাম সাগরভাষা। প্রতিবছর প্রচুর ধরে। খেতে মিষ্টি। পাকে দেরিতে। দাম পাওয়া যায় ভালো। স্থানীয় জাতের এই আম খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও লাভজনক। স্থানীয় এমন ১৪৫ জাতের আম নিয়ে রাজশাহীর বাঘায় অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী কৃষিপ্রযুক্তি মেলা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আয়োজিত মেলা ১৩৫ জাতের আম নিয়ে শুরু হয়েছিল। তিন দিনের মেলা শেষ হতে হতে আরও ১০ জাতের আম যুক্ত হয়। আমের স্বাদ, গন্ধ, চেহারা দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। আজ শনিবার বিকেলে এ মেলা শেষ হয়।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ‘আসলে রাজশাহীর আম বলতে আমি বাঘার আমকেই দেখতে পাই। জেলার সব কটি উপজেলার মধ্যে বাঘাতেই সবচেয়ে সুমিষ্ট ও ঐতিহ্যবাহী আমের চাষ হয়। বাঘার আমের ঐতিহ্যের সঙ্গে দেশবাসীকে পরিচিত করানোর জন্যই কৃষিপ্রযুক্তি মেলায় আমের স্টল করার আহ্বান জানাই। উৎসাহী চাষিরা বিচিত্র স্বাদের ও বিচিত্র নামের আম নিয়ে মেলায় আসেন। ১৩৫ জাতের আম নিয়ে মেলা শুরু হয়েছিল। শেষ হতে হতে আম এসে দাঁড়ায় ১৪৫ জাতে।’
বাঘার পারসাওতা গ্রামের আমচাষি শাহাবুল ইসলাম তাঁর বাগানের সুরুজগুটি আম নিয়ে মেলায় আসেন। আম খেতে সুস্বাদু। আঁটি বড় নয়, বৈশাখের প্রথম সপ্তাহের দিকেই পাকে।
শাহাবুল ইসলাম বললেন, বাজারে খুব চড়া দামে এই আম বিক্রি হয়। এবার প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাঁদের পূর্বপুরুষের আমল থেকে এই আমের চাষ হচ্ছে। এখনো বাগানে ১০টি গাছ আছে। আমের প্রচার ও প্রসারের জন্য তিনি মেলায় এসেছিলেন। দর্শনার্থীরা তাঁর আম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
আরিপপুর গ্রাম থেকে আবদুল হক এনেছিলেন হাতিঝোলা জাতের আম। আকারে বেশ বড় আমটি স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রথমে মানুষ এসে আমটির দিকেই নজর দিচ্ছেন। হক জানান, দর্শনীয় চেহারার জন্য এই আম বিখ্যাত, খেতেও ভালো।
উপজেলার হরিণা গ্রাম থেকে চাষি রফিকুল ইসলাম এনেছিলেন বিশ্বসুন্দরী জাতের আম। তাঁর ভাষ্য, এই আম দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, খেতেও খুব রসাল ও সুস্বাদু। আম বাজারজাত করতে মোটেও বেগ পেতে হয় না। সিলেটে বেশি বিক্রি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এটি সিলেটি আম। আমটি সিলেটের বাজারে নিয়ে গেলে অন্য আম তেমন বিক্রি হয় না। বিশ্বসুন্দরী বাজারে থাকলে ক্রেতারা অন্য আমের কাছে যান না।
বাউসা গ্রাম থেকে কাটিমন আম নিয়ে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, বছরে তিনবার এই আম ধরে। খেতে খুবই ভালো। অসময়ে পাওয়া যায় বলে বেশ দামে বিক্রি করা যায়। ১২ হাজার থেকে শুরু করে ১৬ হাজার টাকা মণ হিসেবে বাজারে বিক্রি হয়।
প্রদর্শনী স্টলে আমগুলো ছোট মাটির পাত্রে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা। প্রতিটি পাত্রে নামফলক আছে। দর্শকের আম চিনতে কোনো অসুবিধা হয়নি। একদিক থেকে সাজানো আমের সারিতে ছিল লক্ষ্মণভোগ, দুধকুমোর, খালসি, ফজলি, আপেলগুটি, হাইব্রিড লকনা, ক্ষীরশাপাতি, ভাদরী, মধুখালসি, হিমসাগর, সুমাসী, পেঁপে, ল্যাংড়া, জগৎমোহনী, কাকড়ি, আড়াজাম, হাতিঝোলা, দুধসাগর, আম্রপালি, আনারসী, মধু চুষকা, মল্লিকা, জাওনী, কালীভোগ, আশ্বিনা, পাগাড়ে, মধুমতি, মিয়াজাকি (সূর্যডিম), ঝিনুক আশ্বিনা, জামাইভোগ, চেংমাই, বড়গুটি, রানিপসন্দ, চোষা, চরুষা, ক্ষীরেস্বর, তোতাপুরী, ঠুটি, জসেরের গুটি।
আরও ছিল অনামিকা, বৈশাখী, জামরুলের গুটি, ফুনিয়া, আড়াজাম, কিষানভোগ, জোহুরা, কালুয়াগুটি, কাদুমা, বারি আম-৪, আনারকলি, চাপাগুটি, ব্যানানা ম্যাংগো, বউভোলানো, বিশ্বসুন্দরী, কিং অব চাকাপাত, ইঁদুরচাটা, চান্দুগুটি, বোম্বাই, বাবুইঝুঁকি, নেংড়ার গুটি, লাখে এক, গুটি (বড়), মিছরিভোগ, খাজাগুটি, গুটি (ছোট), বাউগুটি, চিনিখোরা, সুরমা ফজলি, ধলাগুটি, চুঙ্গাভোগ, বাঘাশাহী, মায়াবতী, মোহনভোগ, বঙ্গবাসী, সাগরভাষা, হাঁড়িভাঙ্গা, আষাঢ়ী, বালেনী, মকসেদগুটি, ছাতুভিজালী, খোদা দাদা, নন্দার্ফাম, কালীভোগ, জাইতুন, কুয়াপাহাড়ি, গোল্লা, বেলী, বারি আম-১১, বাতাসী, সেনরী, গৌড়মতি, ধমীয়া, ভুজাহারী, কাটিমন (বারোমাসী)।
সিঁদুরি, চাপাতি, গোপালভোগ, মোহনঠাকুর, মধুরানি, বেলী, মিছরিছানা, কইতরগুটি, দুধসর, সালামভোগ, জিলাপিকাড়া, গুটি আম (প্রতিটি এক কেজি), কুমড়া জালি, শ্যামলতা, গোলকাচামিঠা, দারোগাভোগ, গোপালখাস, মালদহ, লেট আনারসী, রংবিলাস, বিন্দাগুটি, রহিমুন, দিলসা, মিছরিকান্ত, মুলতানি, চন্দনভোগ, কাজীপসন্দ, মোহনবাসী, কালীভোগ, সুরসীগুটি, মিছরি দমদম, ঝুমকা গুটি, বেঁকে বৈশাখী, বাজেকলম, রাশিদা সুন্দরী, খাগড়াই, বাদল, সুরুজ গুটি, ঠাকুরের ভিটা, রঘুনাথগুটি, সিলেটি গুটি, সবেদা, সিঙ্গাপুরী ল্যাংড়া, আতা খালসী, আবুলগুটি, শাওনী আঁটি, রূপসুন্দরী, চন্দনসুরী, আদরী, পেতা ও মধুমতি গুটি।
শুরুতে দেখা গেল, একটি ঝোপায় পাকা একটি আম ঝুলে আছে। চাষি এনামুল হক বলেন, এটি জগৎমোহিনী জাতের আম। ২১টি আম এক ঝোপায় এসেছিল। পাকতে পাকতে সব শেষে আর একটি আম আছে। পাকা আম দেখে দর্শকেরা এসেই জগৎমোহিনীর ঘ্রাণ নিয়েই ফিরছেন।