উন্নয়নের স্বার্থে চীন ও এই অঞ্চলের সবাইকে কাজ করা উচিত : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে চীন ও এই অঞ্চলের দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
শুক্রবার সকালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘চীন-দক্ষিণ এশিয়া সভ্যতা ও সংযোগ: ইতিহাস ও সমসাময়িক বিষয়’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন। দুই দিনব্যাপী ওই সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় এই বিষয়টি জরুরি যে আমরা চীনের সঙ্গে একযোগে কাজ করব। কেবল কৌশলগত অংশীদার হিসেবে নয়, বন্ধু হিসেবেও।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে একটি নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রয়োজন। সবচেয়ে কার্যকর রুটটি মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে যায়। আমরা অধিকার ও নিরাপত্তার সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবর্তনসহ একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমারের প্রত্যাবর্তনের আশা করছি। আমাদের দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধার জন্য যাতে এই সংযোগ স্থাপন করা যায়। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে, দারিদ্র্য কমাতে এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘২০১৬ সালে চীনের রাষ্ট্রপতি সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে জোরদার করেছে। তাঁর ওই সফর আমাদের দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বের স্তরে উন্নীত করেছে। এ বছর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এই নতুন অংশীদারত্ব আস্থা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বাণিজ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে অবদান রেখে ১৯৭৫ থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির যাত্রাপথে চীন অবিচল অংশীদার। সেতু ও শিল্পপার্ক থেকে শুরু করে আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়নে বৃত্তি এবং প্রশিক্ষণে অংশীদার চীন। বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে চীনের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’
দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রশংসা করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জলবায়ু পরিবর্তন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও অথনৈতিক বৈষম্য মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ নেওয়ার আহ্বান জানান।
অধিবেশনে আরও বক্তৃতা করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা কর্মসূচি এবং মেধার লালন ও বিনিময় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশি শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে তাঁর দেশ প্রস্তুত বলে উল্লেখ করেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আঞ্চলিক সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও সভ্যতা–সংক্রান্ত জ্ঞান উন্নয়নের লক্ষ্যে এই সহযোগিতা দরকার। এই সহযোগিতা চীন ও বাংলাদেশি শিক্ষাবিদদের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করবে এবং এই অঞ্চলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।
অনুষ্ঠানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী গবেষণা, সাংস্কৃতিক আদান–প্রদান ও যৌথ প্রকল্পে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী চীনে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ খুঁজছেন।
অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী ইউনান বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেন। এই অঞ্চলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কনফুশিয়াস ইনস্টিটিটিউ প্রতিষ্ঠায় কাজ শুরু করেছেন তাঁরা।
পাওয়ার চায়না ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ লিমিটেডের এদেশীয় উপব্যবস্থাপক হান কুন ও ওভারসিজ চায়নিজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ঝাও শিবো এ স্মারক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।