দেশে দিন দিন ফ্যাটি লিভারে (লিভারে চর্বি জমা) আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ—মানুষের ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অস্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিহার এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
বিশ্ব ফ্যাটি লিভার দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এসব কথা বলেন।
এ সভায় সহযোগিতা করে দেশের অন্যতম শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এ আয়োজনের সায়েন্টিফিক পার্টনার ছিল সিফিবেট ও ইসোরাল মাপস।
সভায় চিকিৎসকেরা বলেন, ফ্যাটি লিভার রোগ দুই রকমের। একটি হচ্ছে অ্যালকোহলিক, যা মদ্যপান করলে হয়। আরেকটি নন-অ্যালকোহলিক, যা মদ্যপান ছাড়াও হয়। বিশ্বের ২৫-৩০ ভাগ মানুষ এই ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে ১০ বছর আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামের ১৯ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এমআরআইয়ের মাধ্যমে ভালোভাবে ফ্যাটি লিভারের পরীক্ষা করা সম্ভব হয়।
সভা থেকে জানানো হয়, লিভারে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি জমলে ফ্যাটি লিভার রোগ হয়। লিভারে চর্বি জমে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হলে একে বলে মেটাবোলিক অ্যাসোসিয়েটেড স্টিয়াটোহেপাটাইটিস বা মাশ। এটি সাধারণ ফ্যাটি লিভার থেকে এক ধাপ খারাপ অবস্থার নাম । ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীদের ২০ শতাংশ মাশে রূপান্তর হতে পারে। মাশ থেকে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের মতো জটিল রোগ হওয়ার শঙ্কা থাকে।
ফ্যাটি লিভার রোগের উপসর্গ সম্পর্কে বলা হয়, এই রোগ হলে পেটের ডান দিকের উপরিভাগে হালকা ব্যথা, অস্বাভাবিক ক্লান্তিবোধ, ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব ও ক্রমশ ওজন কমতে থাকে। বয়স ৫০-এর বেশি হলে এবং হেপাটাইটিস বি ও সি রোগে আক্রান্ত হলেও ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই ঝুঁকি এড়াতে অতিরিক্ত ওজন কমানোর পাশাপাশি দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টা হাঁটা, অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার, ফাস্ট ফুড পরিহার করা, মদ্যপান ও ধূমপান বর্জন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক মাহমুদ হাসান সভায় তিনি বলেন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও শরীরচর্চা করতে হবে। কোমল পানীয় ও মধ্যপান পরিহার করতে হবে। এগুলো করে এই রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই পরিবর্তন আনতে পারলে কেবল ফ্যাটি লিভার থেকে নয়, অন্যান্য রোগ থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যাবে।
ফ্যাটি লিভার হলে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভিজিটিং প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম। এই রোগের কোনো চিকিৎসা বিশ্বের কোথাও নেই বলেও জানান তিনি। সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হলে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ পর্যন্ত ঝুঁকি নেই। এই রোগ তৃতীয় ধাপে গেলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চতুর্থ ধাপে গেলে লিভার সিরোসিস রোগ হয়।
ফ্যাটি লিভার রোগের উপসর্গ সম্পর্কে বলা হয়, এই রোগ হলে পেটের ডান দিকের উপরিভাগে হালকা ব্যথা, অস্বাভাবিক ক্লান্তিবোধ, ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব ও ক্রমশ ওজন কমতে থাকে।
আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও সুস্থ জীবনযাত্রাই এ রোগের মূল চিকিৎসা। বাস্তবে এ রোগের তত বেশি ওষুধও নেই। যাঁদের ক্ষেত্রে এই রোগ গুরুতর পর্যায়ে (তৃতীয় বা চতুর্থ ধাপে) পৌঁছে গেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা ও তথ্য মূল্যায়ন করে এগোতে হবে।
এখন না থাকলেও ফ্যাটি লিভারের একটি ওষুধ আসতে যাচ্ছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন ফিরোজ আহমেদ।
ফ্যাটি লিভার রোগ সম্পর্কে এখনো অনেক মানুষ জানে না বলে উল্লেখ করে অভিনেতা ও সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, দেশের বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত—এই দিক থেকে দুর্ভাবনা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) ফ্যাটি লিভারের ওষুধ অনুমোদন দিলে তা দ্রুত দেশে উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানান এসকেএফের জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) মো. গোলাম হায়দার।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ সায়েদুল আরেফিন, সহযোগী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের পরামর্শক রাজ দত্ত।