কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া উপকূলে একটি ট্রলারের মাঝিকে গুলি করে হত্যার পাশাপাশি ১৯ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে জলদস্যুরা। নিহত মাঝির (সারেং) নাম মোহাম্মদ মোকাররম (৪৫)। আজ বৃহস্পতিবার ভোর চারটায় এফবি আল্লাহর দয়া নামের ট্রলারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় জেলেদের ধরা কয়েক লাখ টাকার ইলিশ মাছ, জাল ও ট্রলার লুট করে নিয়ে যায় জলদস্যুরা।
জেলেরা বলছেন, সোনাদিয়া দ্বীপের ১০-১১ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে ওই ট্রলারটি জলদস্যুর কবলে পড়ে। নিহত মোকাররমের বাড়ি কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের আজিম উদ্দিন সিকদার পাড়ায়। তিনি উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য রহিমা বেগমের স্বামী।
ইউপি সদস্য রহিমা বেগম বলেন, আজ সকালে স্বামী মোকারমের মৃত্যুর কথা জানতে পারেন তিনি। সকাল পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাঁর স্বামীর লাশ উদ্ধার করেছে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করেন।
রহিমা বেগম আরও বলেন, ২১ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে গত সোমবার সন্ধ্যায় বাঁশখালীর শেখেরখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইলের মালিকানাধীন এফবি আল্লাহ দয়া নামের ট্রলার নিয়ে ২০ জন জেলে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ ধরতে যান। ওই ট্রলারের মাঝি ছিলেন মোহাম্মদ মোকাররম। গত বুধবার দুপুরে গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ট্রলারটি কক্সবাজারের ফিশারি ঘাটের দিকে ফিরছিল। আজ ভোরে এটি মহেশখালীর সোনাদিয়ার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছালে জলদস্যুদের কবলে পড়ে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল হালিম। তিনি বলেন, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের লুটপাট বেড়েছে। তাতে জেলেদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রলার মালিক বাঁশখালীর বাসিন্দা মো. ইসমাইল বলেন, জলদস্যুদের গুলিতে মাঝি মোকাররম গুরুতর আহত হয়ে ট্রলার থেকে সাগরে ছিটকে পড়েন। এরপর জলদস্যুরা ১৯ জেলেসহ ট্রলারটি লুট করে নিয়ে যায়। অপর একটি মাছ ধরার ট্রলার সাগর থেকে মোকাররমকে উদ্ধার করে কুতুবদিয়ার মগনামা ঘাটে আনে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম নেওয়ার পথে বাঁশখালীতে তাঁর মৃত্যু হয়।
আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ট্রলারসহ অপহৃত ১৯ জেলের সন্ধান মেলেনি বলে জোন ট্রলার মালিক মোহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, সাগরে মহেশখালী-কুতুবদিয়া এলাকার একাধিক জলদস্যু বাহিনী তৎপর রয়েছে। মহেশখালীর জলদস্যু ‘মঞ্জুর বাহিনী’ তাঁর আল্লাহর দয়া ট্রলারে গুলি ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত বলে খবর পেয়েছেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ১৯ জেলেসহ ট্রলারটি কোথায় আছে—তার অনুসন্ধান চলছে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত সন্ধান মেলেনি।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মহেশখালীর গভীর সাগরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এক জেলের মরদেহ বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশটি পাঠানো হয়।