‘খুব ভয় লাগছে, রাতে ঘুম হয় না...’

‘শিশুদের কেন মারছে?’ ‘কেন গ্রেপ্তার করছে?’ ‘খুব ভয় লাগছে’, ‘রাতে ঘুম হয় না, খিদে লাগে না’, ‘পরীক্ষা কবে হবে?’, ‘পড়া যা পড়েছিলাম সব ভুলে যাচ্ছি, আমার কী হবে! ’—উদ্বেগ জানিয়ে এমন সব প্রশ্ন করেছে শিশুরা।

সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে শিশুরা নিজেদের উৎকণ্ঠা ও ভয়ের কথা প্রকাশ করেছে। হেল্পলাইনের তথ্য অনুসারে, গত ২০ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট কল এসেছে ৪৫ হাজার ৯১৮টি, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি।

কেউ কেউ অনেক ভয় নিয়ে বলেছে, তারা যা পড়েছিল, তা ভুলে যাচ্ছে। গ্রেপ্তার ও মৃত্যুর ঘটনার খবর দেখার পর অনেক শিশু ভয় পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন, চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮-এর সমন্বয়ক।

হেল্পলাইনের তথ্য অনুযায়ী, ২০ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ৪৫ হাজার ৯১৮টি কল এসেছে, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এর আগে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসে ৪৩ হাজার ১২২টি কল এসেছিল। সেই হিসাবে, জুলাইয়ের শেষ ১২ দিনে সে সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে এ সময়ে কলের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল বলে মনে করছেন ১০৯৮-এর কর্মকর্তারা।

চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ নম্বরের ব্যবস্থাপক চৌধুরী মো. মোহায়মেন গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ১০৯৮-এ দিনে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কল আসে। ২০ জুলাইয়ের পর থেকে দিনে কলের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ সময়ে দেশের পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে কল করেছে শিশু-কিশোরেরা। কল করেছেন অভিভাবকেরাও।

আরও পড়ুন

চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন আরও বলেন, কেউ কেউ অনেক ভয় নিয়ে বলেছে, তারা যা পড়েছিল, তা ভুলে যাচ্ছে। গ্রেপ্তার ও মৃত্যুর ঘটনার খবর দেখার পর অনেক শিশু ভয় পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

ফোন করে শিশুরা কোন সমস্যার কথা বেশি বলেছে, জানতে চাইলে চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন বলেন, ‘১২ দিনের হিসাব ধরলে বেশির ভাগ কলই ছিল মনোসামাজিক সমস্যা, পরীক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ের তথ্য চেয়ে। মনোসামাজিক সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে কাউন্সিলররা শিশুদের পরামর্শ দিয়েছেন।

পরিবারের বড় যাঁরা আছেন, তাঁদের খোলাখুলি কথা বলতে হবে শিশুদের সঙ্গে। শিশুদের ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না। ভুল প্রতিশ্রুতিও দেওয়া যাবে না। শিশুদের দোষারোপ করা যাবে না। শিশুদের অভয় দিতে হবে, পরিবারের বড়রা তাদের নিরাপত্তা দিতে পাশে আছেন।
কামাল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক।

কারফিউ জারির পর ১৯ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ১০ জনের একটি দল ২৪ ঘণ্টা ১০৯৮-এর কার্যালয়ে অবস্থান করে কল ধরেছেন, সেবা দিয়েছেন। শনিবার (৩ আগস্ট) রাত থেকে আবারও একই প্রক্রিয়ায় সেবা চালু হচ্ছে বলেও জানান চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন।

আরও পড়ুন

ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) প্রকল্পের আওতায় চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ পরিচালিত হয়। ২০১০ সালে বেসরকারি সংস্থা অপরাজেয় বাংলাদেশের সঙ্গে পাইলট প্রকল্প আকারে এটি চালু হয়। পরে ২০১৬ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিদিন পালা করে টোলমুক্ত এ নম্বরে আসা কল ধরেন ২৮ জন এজেন্ট।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে শিশুদের নিরাপদ বোধ করানোটা জরুরি বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী। তিনি বলেন, শিশুরা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি কল এসেছে। এর বাইরে আরেকটি দল আছে, যাদের পরিবারের কেউ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতে মারা গেছেন বা গ্রেপ্তার হয়েছেন। সেসব পরিবারের শিশুরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত না হয় এবং ওই শিশুদের যদি মানসিক সহায়তা দেওয়া হয়, তাহলে তারা মানসিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।

আরও পড়ুন

এ রকম সময়ে শিশুদের ভয় কাটাতে কী করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল চৌধুরী বলেন, পরিবারের বড় যাঁরা আছেন, তাঁদের খোলাখুলি কথা বলতে হবে শিশুদের সঙ্গে। শিশুদের ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না। ভুল প্রতিশ্রুতিও দেওয়া যাবে না। শিশুদের দোষারোপ করা যাবে না। শিশুদের অভয় দিতে হবে, পরিবারের বড়রা তাদের নিরাপত্তা দিতে পাশে আছেন।

১০৯৮-এ কল করে শিশুরা কী কী সহায়তা চেয়েছে, বিশ্লেষণ করে পরামর্শগুলো কী হতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে বলেও জানান কামাল চৌধুরী।