গ্রেপ্তারকৃতদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে হবে: সচেতন নাগরিক সমাজ

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের প্রিজন ভ্যানে কারাগারে নেওয়ার পথে স্বজনদের আকুতি। গত ২৮ জুলাই বিকেলে রাজধানীর সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গণেফাইল ছবি

চলমান উত্তেজনা প্রশমনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃতদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা অবশ্য এ-ও বলছে, এই ঘোষণা জঙ্গি সন্ত্রাসী কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের জন্য চিহ্নিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রোববার সচেতন নাগরিক সমাজ ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ গণমাধ্যমে এ বিবৃতি দেয়।

দফাগুলো হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরকারকে প্রকাশ করতে হবে। এসব মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের যথাযথ বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বন্ধ থাকা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে সব ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।  

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্ততপক্ষে এক বছরের জন্য ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং মানসম্পন্ন শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ও আহত সব ব্যক্তিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আন্দোলনকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের প্রতি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, দ্রুত সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে ন্যায়সংগত দাবি পূরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্বের স্বার্থে তৃতীয় পক্ষের হয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত মাসে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেন। যদিও সেখানে পরে তৃতীয় শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে। ছাত্রদের একটি ন্যায়সংগত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সংঘাত, হত্যা ও সন্ত্রাসের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো।

চলমান আন্দোলন মোকাবিলায় সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর অবিমৃশ্য মন্তব্য, আন্দোলন দমনের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়াবাড়ি এবং গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতার দায় সরকার এড়াতে পারে না বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, এক মাসের আন্দোলনে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হওয়া এবং কয়েক হাজার আহতের ঘটনা কোনো অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না। রোববার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় পক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় বহু কোটি টাকার সরকারি সম্পদ ধ্বংস হলেও হতাহতের যেসব মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটেছে, যেভাবে শত শত পরিবারের স্বপ্ন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও জীবিকা ধ্বংস হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। তা কখনো পূরণ করা যাবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্রদের চলমান আন্দোলনে অভিভাবক ও নাগরিকদের বিভিন্ন অংশের সমর্থনের সুযোগে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। সরকার পরিবর্তন যদি আন্দোলনকারীদের প্রধান উদ্দেশ্য হয়, সেটা হতে হবে সাংবিধানিকভাবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। সংঘাত, সন্ত্রাস ও অমূল্য প্রাণহানির মাধ্যমে নয়।