আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্ষেত্রে সেরা অনুশীলন, উদ্ভাবন এবং জ্ঞান ভাগাভাগি করার লক্ষ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘স্কুলস নাউ! সম্মেলন ২০২৪’। এবারের ‘ফেস-টু-ফেস’ পঞ্চম আসরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘এনরিচিং ইওর কারিকুলাম’।
গত ২৭ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত এই সম্মেলনে অফলাইন ও অনলাইনে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সারা বিশ্বের পার্টনার স্কুলগুলো থেকে শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন। যাঁরা পরস্পরের সঙ্গে নিজ নিজ শিক্ষাক্রম নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা এবং পারস্পরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে মতামত আদান-প্রদান করেন। এবারের আসরে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেন ২৮ জন প্রতিনিধি।
সম্মেলনটির বিভিন্ন দিক এবং স্কুলের শিক্ষাক্রমকে কীভাবে আরও সমৃদ্ধ করা যায়, তা নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে এবং প্রথম আলোর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ টক শো।
গতকাল সোমবার প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে একযোগে প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি। এতে অংশ নেন স্যার জন উইলসন স্কুলের অধ্যক্ষ সাবরিনা শহীদ, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু কায়েস জেহাদী, স্কলাসটিকার হেড অব একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স সাবিনা মুস্তাফা এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর সারওয়াত রেজা। উপস্থাপনা করেন মৌসুমী মৌ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্মেলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতিনিধি সারওয়াত রেজা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে ব্রিটিশ কাউন্সিলের পার্টনার স্কুলের ৫০০ জন প্রতিনিধি এবারের বার্ষিক মিলনমেলায় যোগদান করেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের “পার্টনার স্কুল” শিরোনামে একটি কার্যক্রম রয়েছে, যার মাধ্যমে স্কুলগুলোর কাছে ইউকে কারিকুলামকে প্রস্তাব করা হয়। এর আগের চারটি সম্মেলন হয়েছিল বিভিন্ন দেশ যেমন দুবাই (আমিরাত), মিসর, শ্রীলঙ্কা ও জর্ডানে। এবারের সম্মেলনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশগ্রহণকারী দেশ ছিল বাংলাদেশ। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।’
এ বছরের প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা-বিশেষজ্ঞরা। সম্মেলনে তাঁরা নেতৃত্বদান, কল্যাণ ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে করণীয় বিষয় এবং ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির একীভূতকরণ নিয়ে উদ্ভাবন ও কেস স্টাডি উপস্থাপন করেছেন।
সামগ্রিক ব্যাপার নিয়ে জানতে চাওয়া হয় স্যার জন উইলসন স্কুলের অধ্যক্ষ সাবরিনা শহীদের কাছে। এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চারটি বিষয়কে একীভূত করার যে ব্যাপারটা আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, এর মাধ্যমে স্কুলগুলো উপকৃত হবে বলে মনে করি। চারটির মধ্যে কল্যাণ বা সুস্থতাকেই বেশি ফোকাস করা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বে এটির প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। তাই সম্মেলন থেকে এসে আমি স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে শুরু করে শিক্ষাক্রম নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, সবার সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। কীভাবে এ চারটি বিষয়কে আমাদের শিক্ষাক্রমে সম্পৃক্ত করা যায়, সে সম্পর্কে সবার মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। এর প্রভাবে আশা করছি, সামনে আমাদের স্কুলগুলোতে একটি কাঠামোগত পরিবর্তন দেখতে পাব।’
‘এ সম্মেলনে যে ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ সামনে আসতে পারে এবং তা সমাধানে আপনার পরামর্শ কী?’ উপস্থাপকের এ প্রশ্নের উত্তরে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু কায়েস জেহাদী বলেন, ‘আমি আগে সমাধানের কথা বলব। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। এখন পাঠদান শিক্ষককেন্দ্রিক, অর্থাৎ শিক্ষক পড়ান, শিক্ষার্থীরা পড়ে। এটাকে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক করতে হবে। তাঁদের পাঠ্যক্রমের বিভিন্ন বাস্তবিক সমস্যা দিতে হবে, তাঁরা নিজেরাই সমাধান খুঁজবে। এর মাধ্যমে তাঁরা শিখবে। আগামীর বিশ্বে কোন চাকরিগুলোর চাহিদা থাকবে, সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে হবে। নৈতিক শিক্ষা যেমন নেতৃত্ব, সহানুভূতি, সমাজে তার অবদান এই বিষয়গুলো শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন মানদণ্ড হিসেবে যুক্ত করতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর দক্ষতায় দক্ষ করে তাঁদের বিশ্বনাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হবে। যখন আমরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের এভাবে তৈরি করতে পারব, তখন যেকোনো চ্যালেঞ্জই সমাধান করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।’
স্কলাসটিকার হেড অব একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স সাবিনা মুস্তাফার কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বাংলাদেশের শিক্ষকেরা কী ধরনের নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন বা কী ধরনের উদ্ভাবন নিয়ে এসে কারিকুলামকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ চারটি বিষয়কে একীভূত করে সম্পৃক্ত করাটাই আমাদের উদ্যোগ। এর মধ্যে একটি ডিজিটাল শিক্ষা, যেটির প্রয়োজনীয়তা হাতেনাতে প্রমাণিত হয়েছে কোভিডের সময়। তাই চারটি বিষয়কে ভারসাম্যে রেখে একীভূত করতে পারলে শিক্ষাক্রম অবশ্যই সমৃদ্ধ হবে। তবে প্রতিটি জিনিসেরই সুফল এবং কুফল রয়েছে। বিশেষ করে ডিজিটাল শিক্ষার অন্যতম উপকরণ ডিভাইসকে যেন শিক্ষার্থীরা অপব্যবহার না করে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর সারওয়াত রেজার কাছে উপস্থাপক জানতে চান, তাঁর মতে এবারের সম্মেলনটি ফলপ্রসূ হয়েছে কি না?
জবাবে সারওয়াত রেজা বলেন, ‘এটা আসলে অংশগ্রহণকারীরাই ভালো বলতে পারবেন এবং আমাদের এখানে যাঁরা উপস্থিত আছেন, তাঁরা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা করেছেন। তবে যতটুকু ফিডব্যাক পেয়েছি, তাতে বুঝতে পেরেছি আমাদের উদ্যোগ সফল হয়েছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান হয়েছে এবং তাঁরা নেটওয়ার্কিংয়ের এই প্ল্যাটফর্মটির সুফল ভোগ করেছেন।’