বাংলাদেশ একটি ব্রোঞ্জ ও পাঁচটি সম্মানজনক স্বীকৃতি পেল

নোবেল শা‌ন্তি পুরস্কার প্রদা‌নের জন‌্য বিখ‌্যাত সিটি হলের মঞ্চে জাতীয় পতাকা হাতে (বাঁ থেকে) মো. আশরাফুল ইসলাম, এস এম এ নাহিয়ান, নুজহাত আহমেদ, তাহজিব হোসেন খান (ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী), তাহমিদ হামিম চৌধুরী ও মো. ফোয়াদ আল আলম। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) এবার একটি ব্রোঞ্জপদক ও পাঁচটি সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা। গণিতের ৬৩তম বিশ্ব আসরে বাংলাদেশ দল দলীয়ভাবে মোট ১১৫ নম্বর পেয়ে ১০৪টি দেশের মধ্যে ৫৭তম স্থান অধিকার করেছে। আইএমওতে দলীয়ভাবে বাংলাদেশ দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর এটি। এর আগে ২০২০ সালে ১১৮ নম্বর পায় বাংলাদেশ।

বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর আইএমও প্রতিযোগিতা হয়েছিল ভার্চ্যুয়ালি। এবার তা সরাসরি হলো। এবারের আয়োজক দেশ নরওয়ে। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় অসলোর সিটি হলে প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের পদক প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ দলের হয়ে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছেন সরকারি আনন্দমোহন কলেজের তাহজিব হোসেন খান। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ২৩। সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন নটর ডেম কলেজের তাহমিদ হামিম চৌধুরী (২১), ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের মো. ফোয়াদ আল আলম (২১), সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের এস এম এ নাহিয়ান (১৯), নটর ডেম কলেজের মো. আশরাফুল ইসলাম ফাহিম (১৭) ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নুজহাত আহমেদ দিশা (১৪)।

এ বছর দলীয়ভাবে ২৫২ নম্বরের মধ্যে ২৫২ নম্বর পেয়ে ৬টি সোনার পদক নিয়ে প্রতিযোগিতায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে চীন। ১৯৯৪ সালের পর আর কোনো দেশ ২৫২তে পূর্ণ নম্বর পায়নি। সেবার ওই বিরল কৃতিত্ব অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র দল। এবার দক্ষিণ কোরিয়া ২০৮ নম্বর নিয়ে দ্বিতীয়, যুক্তরাষ্ট্র ২০৭ নিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।

এবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত ১৬৫ নম্বর নিয়ে ২৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭৭ নম্বর পেয়ে ৭৩তম, পাকিস্তান ৫৪ নম্বর নিয়ে ৮২তম ও নেপাল ২৭ নম্বর নিয়ে ৮৯তম স্থান অধিকার করেছে। আয়োজক দেশ নরওয়ে ৬১তম স্থান অর্জন করেছে।

প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের জ্যামিতি, কম্বিনেটরিক্স, নাম্বার থিউরি ও বীজগণিতের মোট ছয়টি সমাধান করতে হয় দুই দিনে। প্রতিদিন তিনটি সমাধানের জন্য সাড়ে চার ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। প্রতিটি দেশ থেকে প্রাক্‌–বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ ছয়জন প্রতিযোগী অংশ নিতে পারেন।

ব্রোঞ্জপদক পাওয়া তাহজিব হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই অর্জনে আমি দারুণভাবে আনন্দিত।’

এই ফলের জন্য খুদে গণিতবিদদের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নানা সংকটে পড়েছে। কিন্তু এ প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের চর্চা চালিয়ে গেছে। এটিই সবচেয়ে বড় আনন্দের।’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ দলের সদস্যদের অভিনন্দন জানান। ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শিরিন পবিত্র হজ পালন শেষে গতকালই দেশে ফিরেছেন। পদক বিজয়ীসহ দলের সব সদস্যকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির পর সারা বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীরাও আবার গণিত জয়ে যুক্ত হয়েছে।’ শিক্ষার্থীরা আগামী দিনগুলোতে আরও ভালো করবে এই আশা ব্যক্ত করে বরাবরের মতো ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক এ আয়োজনে যুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।

এবারেরসহ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ১টি সোনা, ৭টি রুপা, ৩২টি ব্রোঞ্জ ও ৩৮টি সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।