আদালত অবমাননা: বিচারক সোহেল রানাকে দেওয়া সাজার রায় স্থগিতই থাকছে
আদালত অবমাননায় অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার রায় স্থগিতই থাকছে। হাইকোর্টের ওই রায়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ চলমান থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিচারক সোহেল রানার করা আপিলের শুনানি আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ।
এর আগে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ গত ১২ অক্টোবর আদালত অবমাননায় সোহেল রানাকে (কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এখন আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত) এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে তিন ঘণ্টার মাথায় একই বেঞ্চ সোহেল রানাকে ৩০ দিনের জামিন দেন। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ওই দিনই আবেদন করেন তিনি। বিকেলে ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত তাঁর কারাদণ্ড ও জরিমানার রায় স্থগিতের আদেশ দেন।
একই সঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে সোহেল রানার করা আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ২০ নভেম্বর শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সোহেল রানা। আগের ধারাবাহিকতায় ওই আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকায় ১২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম ও এম হারুনুর রশীদ খান।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়েছেন আপিল বিভাগ। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সোহেল রানার করা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা হয়েছে। আপিলের সঙ্গে নিঃশর্ত ক্ষমার একটি আবেদনও রয়েছে।’
এক মামলায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিল করেছিলেন কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা। ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে তাঁর প্রতি গত ২৮ আগস্ট আদালত অবমাননার রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রুলের শুনানি নিয়ে গত ১২ অক্টোবর রায় দেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। রায়ে সোহেল রানাকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং তাঁকে ৭ দিনের মধ্যে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয় রায়ে। এ রায় স্থগিত থাকছে।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে মামুন-রিয়া দম্পতির করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। একই সঙ্গে মামলাটির কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
২০১৯ সালের ৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কুমিল্লার তৎকালীন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা গত ১০ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনকালে আদালতে মামুন উপস্থিত ছিলেন। রিয়া অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে পলাতক ঘোষণা করেন আদালত।
এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সোহেল রানাকে হাজির হতে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন মামুন। গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে সোহেল রানাকে তলব করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গত ২১ আগস্ট তাঁকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়।
ধার্য তারিখে তিনি হাইকোর্টে হাজির হন। পরবর্তী সময়ে জবাব দাখিল করেন। তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৮ আগস্ট সোহেল রানার প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ৯ অক্টোবর তাঁকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত অবমাননার রুলের পর গত ৩১ আগস্ট সোহেল রানা মামলাটির অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রত্যাহার করেন। হাইকোর্টের ধার্য তারিখে সোহেল রানা সময়ের আরজি জানান। হাইকোর্ট ১২ অক্টোবর তারিখ রাখেন। সেদিন আদালতে সোহেল রানা উপস্থিত ছিলেন। আদালত অবমাননার রুলের পরিপ্রেক্ষিতে সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাঁর ক্ষমা প্রার্থনায় সন্তুষ্ট না হওয়ায় হাইকোর্ট তাঁকে জেল-জরিমানা করে রায় দেন।