ঢাকায় পুলিশের ১ হাজার ৪৯৮টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট

  • ঢাকায় পুলিশের কাজে ব্যবহৃত ৯৪টি গাড়ি ভাঙচুর ও ৮৭টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

  • খোয়া যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার করতে পেরেছে ডিএমপি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ভাটারা থানাফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ও তার পরদিন রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে ১ হাজার ৮৯৮টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে বা খোয়া গেছে। ওই সময়ে থানা ভবন, ফাঁড়িসহ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন ১৪২টি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে ১৮১টি গাড়ি।

ডিএমপি সূত্র বলছে, খোয়া যাওয়া বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের মধ্যে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪৫৩টি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ১ হাজার ৪৪৫ অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি। বাকি অস্ত্রগুলো উদ্ধারে প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে।

ডিএমপির আওতাধীন থানার সংখ্যা ৫০। ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, হামলা–ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর থানা। তিনটি থানা ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব থানা থেকে অস্ত্র লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়।

থানা ভবন, ফাঁড়িসহ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন ১৪২টি স্থাপনায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট বিকেল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। পরে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। ১৩ আগস্ট থেকে ঢাকার ৫০ থানার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। এখনো অনেক থানায় পুলিশের কার্যক্রমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেনি।

ডিএমপি সূত্র জানায়, লুট হওয়া বা খোয়া যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, পিস্তল, শটগান ও গ্যাসগান (কাদানে গ্যাস ছোড়া হয়)। ৫ আগস্ট ডিএমপিতে বিভিন্ন ধরনের ৪৯ হাজার ৫০০ আগ্নেয়াস্ত্র ও কাঁদানে গ্যাস মজুদ ছিল। এর মধ্যে ৫ আগস্ট ও পরদিন ১ হাজার ৮৯৮টি অস্ত্র লুট হয় বা খোয়া যায়।

পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৩৪৮টি চায়না রাইফেল, শটগান ৭০৩টি, ৩০টি এসএমজি (টি–৫৬ চায়না মডেল), ১৩টি এলএমজি, ৮৯টি পিস্তল (টি–৫৪ চায়না), ৫৬০টি পিস্তল, ১৫২টি গ্যাসগান ও ৩টি টিয়ার গ্যাস লাঞ্চার।

ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে প্রতিদিনই অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে। বেশ কিছু অস্ত্র আবার সেনাবাহিনীও উদ্ধার করেছে। সেগুলো পুলিশের কাছে জমা দেবে তারা। লুট করা বাকি অস্ত্র উদ্ধারে সময় বেঁধে দিয়ে একটি ঘোষণা দেবে ডিএমপি। ওই সময়ের মধ্য অস্ত্র ফেরত না দিলে যাঁদের কাছে অস্ত্র পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত

ডিএমপির করা তালিকা অনুযায়ী, ৯১টি পুলিশ ফাঁড়ি, ২১টি থানা ভবন, ১০টি ট্রাফিক বক্স, ১২টি কার্যালয় ও ৮টি আবাসিক ভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। থানা ভবনগুলোর মধ্যে ১৩টিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে বাড্ডা, আদাবর, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর মডেল, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, পল্টন মডেল, শেরেবাংলা নগর, শ্যামপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ভাটারা, ওয়ারী ও খিলক্ষেত থানা।

ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তালিকার করার দায়িত্বে থাকা ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যেসব থানা ভবন সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর একেকটি মেরামতে অন্তত ১০ কোটি টাকা লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা ভবনগুলোর তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, যেসব থানা ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে প্রতিদিনই অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে। বেশ কিছু অস্ত্র আবার সেনাবাহিনীও উদ্ধার করেছে।
ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান

১৮১ গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

ডিএমপি সূত্র জানায়, ৫ ও ৬ আগস্ট পুলিশের ব্যবহৃত ১৮১টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৪টি গাড়ি ভাঙচুর ও ৮৭টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশের টহলে ব্যবহৃত পিকআপ, পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ব্যবহৃত জিপ ও উপকমিশনারের ব্যবহৃত পাজেরো জিপ।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গাড়ির সংকটে টহল কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে। পুলিশের নিয়মিত অভিযান পরিচালনার কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার নাইম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, খোয়া যাওয়া অস্ত্র দ্রুত উদ্ধার করা না গেলে নানা ধরনের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। ভবিষ্যতে এসব অস্ত্র অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে পারে। তাই অস্ত্র উদ্ধারে সময় বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।