মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে ১০ কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তদন্ত সংস্থায় কোঅর্ডিনেটর পদে মো. মাজহারুল হককে (অ্যাডিশনাল ডিআইজি, অবসরপ্রাপ্ত) এবং কো–কোঅর্ডিনেটর পদে মুহাম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরীকে (পুলিশ সুপার, অবসরপ্রাপ্ত) যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে আজ বুধবার এ–সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন এবং জনবল নিয়োগ, অন্তর্ভুক্তকরণ ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে ইতিপূর্বে জারি করা প্রজ্ঞাপনগুলো বাতিল বলে গণ্য হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার পর গত ১৪ বছরে ট্রাইব্যুনাল ৫৫টি মামলায় রায় দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে বেশ কয়েকজনের দণ্ডও কার্যকর হয়েছে।
গণ–অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান তিনি। গত ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ১৪ আগস্ট সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা হবে।
এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীরা গত মাসে পদত্যাগ করেন। ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনার জন্য প্রসিকিউটর নিয়োগের কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আইনজীবী মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ ও আবদুল্লাহ আল নোমানকে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তদন্ত সংস্থার একাধিক সূত্র জানায়, বিগত সরকারের সময় তদন্ত সংস্থায় সমন্বয়কসহ ১০ জন কর্মকর্তা ছিলেন। ইতিমধ্যে চারজন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়। তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠনের আগে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ছয়জন কর্মরত ছিলেন।
তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক মাজহারুল হক
তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩–এর ধারা ৮(১)–এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ওই আইনের ৩ ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলোর তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত তদন্ত সংস্থা নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পুনর্গঠন করা হলো। ১০ কর্মকর্তা হলেন মো. মাজহারুল হক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি, অবসরপ্রাপ্ত), মুহাম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরী (অবসরপ্রাপ্ত, পুলিশ সুপার), মো. আলমগীর (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট ঢাকা), মোহা. মনিরুল ইসলাম (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স), মো. জানে আলম (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ঢাকা), সৈয়দ আবদুর রউফ (সহকারী পুলিশ সুপার, ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুল, ঢাকা), মো. ইউনুছ (পুলিশ পরিদর্শক–নিরস্ত্র, সিআইডি), মো. মাসুদ পারভেজ (পুলিশ পরিদর্শক–নিরস্ত্র, চারঘাট মডেল থানা, রাজশাহী), মুহাম্মদ আলমগীর সরকার (পুলিশ পরিদর্শক–নিরস্ত্র, আরআরএফ–ঢাকা) ও মো. মশিউর রহমান (পুলিশ পরিদর্শক–নিরস্ত্র, সিআইডি, ঢাকা মেট্রো–উত্তর)।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব ইসরাত জাহানের সই করা এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের অধীনে পরিচালিত বিচার অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তদন্তকাজ সম্পাদন ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনকে সহায়তা প্রদান করবেন। তদন্ত সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত যেসব সদস্য বর্তমানে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত আছেন, তাঁরা প্রেষণে নিয়োজিত আছেন মর্মে গণ্য হবেন। যেসব সদস্য বর্তমানে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত নন, তাঁরা যে পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন এবং ওই পদে যে মূল বেতন ও ভাতাদি আহরণ করেছেন, বর্তমানে তাঁরা অবসরকালীন আহরিত মূল বেতনের জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫–এর করেসপন্ডিং স্কেলে মূল বেতন ও ভাতাদি সাকল্য হিসেবে প্রাপ্য হবেন।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তদন্ত সংস্থায় উল্লিখিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত ওই পদে বহাল থাকবেন। প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তারা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তদন্ত সংস্থায় কর্মরত থাকবেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব ইসরাত জাহানের সই করা অপর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩–এর ধারা ৮(১)–এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ওই আইনের ৩ ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলোর তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত তদন্ত সংস্থায় কোঅর্ডিনেটর পদে মো. মাজহারুল হককে (অ্যাডিশনাল ডিআইজি, অবসরপ্রাপ্ত) এবং কো–কোঅর্ডিনেটর পদে মুহাম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরীকে (পুলিশ সুপার, অবসরপ্রাপ্ত) যোগদানের তারিখ হতে পরবর্তী দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো।