মুক্তচিন্তার পায়ে বেড়ি লাগাতে সাইবার নিরাপত্তা আইন: আলোচনা সভায় বক্তারা
গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, কার জন্য সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে? এই আইন সাইবার নিরাপত্তার জন্য নয়। সরকার নিজের নিরাপত্তার জন্য আইনটি করছে। আইনটির মাধ্যমে সাংবাদিকতা ও মুক্তচিন্তার পায়ে বেড়ি লাগানো হবে।
আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন: বাক্স্বাধীনতা হরণের নয়া হাতিয়ার’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থেকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের পার্থক্য হচ্ছে প্রেসক্লাবের দোতলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ধারাগুলো স্পষ্ট করা হয়নি। কার জন্য এই সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে? সরকার নিজের নিরাপত্তার জন্য আইনটি করেছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে মান্না বলেন, সেমিনার করে আন্দোলন হবে না। রাস্তায় নামতে হবে। মানুষ পরিবর্তন চায়। হিসাব করে আন্দোলন হয় না। সঠিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আইনটির পোশাক পরিবর্তন হলেও ভেতরে সব এক। নির্বাচনের আগে বিদেশিদের বুঝ দিতে আইনটি করা হচ্ছে। আইনটির সংজ্ঞা আগের মতোই আছে। পুলিশ চাইলেই যে কাউকে ধরতে পারবে। গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এই আইনে মামলা হতে পারে। এটা সাইবার নিরাপত্তা নয়, সরকারের নিরাপত্তা আইন। কোনো আলোচনা না করেই আইনের খসড়া অনুমোদন হয়েছে। মতামতও আমলে নেওয়া হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন করলে বাস্তবিক অর্থে কোনো পরিবর্তন হয় না। আইনটির মাধ্যমে সাংবাদিকতায় ও মুক্তচিন্তার পায়ে বেড়ি লাগানো হবে।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার ভুক্তভোগী কয়েকজন এই আলোচনা সভায় অংশ নেন। তাঁদের একজন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থবিষয়ক সম্পাদক দিদারুল ভূঁইয়া। দিদারুল নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলার শুনানি পর্যন্ত কেউ করতে রাজি হননি। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও করা হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ১০ মাস কারা ভোগরত অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন লেখক মুশতাক আহমেদ। তাঁকে আসলে খুন করা হয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাঙামাটি জেলার নেতা নির্মল বড়ুয়া বলেন, তিনি স্থানীয় পর্যায়ে একটি অনলাইন পোর্টাল চালান। সেখানে সংবাদ প্রকাশের জেরে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় লোকজন তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা করেন। তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বর্তমান সরকারের শাসন টিকিয়ে রাখতে এ ধরনের আইনের প্রয়োজন পড়ছে। ভিন্নমত দমনপীড়ন আইনিভাবে বৈধ করার পদ্ধতি সাইবার নিরাপত্তা আইন। এই আইন বাতিলের আন্দোলন করা মানে সরকার পতনের আন্দোলন করা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে কারাগারে দীর্ঘদিন আটকে রাখা নিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, তরুণদের ভয় দেখাতে তাঁকে (খাদিজা) ছাড়া হচ্ছে না।
সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আইনের শুধু নাম বদলে দিয়ে ধাপ্পা দেওয়ার চেষ্টা করেছে সরকার। ৫৭ ধারাকে চার টুকরা করে আরও কঠোরভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছিল।
একটা আইনের নাম বদলে দিয়ে মানুষকে বোকা বানানো যায় বলে যাঁরা মনে করেন, তাঁরা মানুষকে মানুষ মনে করেন না। সাইবার নিরাপত্তার নাম করে নিজেদের রাজনৈতিক নিরাপত্তা আইন বানানো হচ্ছে। এই আইনের মাধ্যমে তাঁরা রাজনৈতিক মতামত নিয়ন্ত্রণ করতে চান।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম, জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব, ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারসহ প্রমুখ।