গাইবান্ধা–৫ আসনে ভোট বন্ধ
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, কোনো একটি পক্ষ প্রভাবিত করতে পারছে: সিইসি
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে এ ঘোষণা দেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কমিশন। সিইসি বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, ভোট গ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কোনো একটি পক্ষ বা কোনো একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রভাবিত করতে পারছেন। ফলে, আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়েছে, ভোট গ্রহণ নিরপেক্ষ হচ্ছে না।’
সিইসি বলেন, সকাল আটটা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সিসিটিভিতে ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নির্বাচন কমিশনের পদস্থ কর্মকর্তারা সিইসিকে অনেক কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কথা জানান।
সিইসি আরও বলেন, ‘আরপিও ৯১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ভোট নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে হতে হবে। কমিশন যদি মনে করে নির্বাচন সঠিকভাবে হচ্ছে না, তাহলে একটি কেন্দ্র বা সব কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ করার দায়িত্ব কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। সেই বিধানের আলোকে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’
অনিয়মের কারণে কয়েক দফায় ৫১টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান সিইসি। নির্বাচন কমিশন মনে করে, ৫১ কেন্দ্রের ভোট বন্ধ হয়ে গেলে বাকি যে কেন্দ্রগুলো আছে, তার ভিত্তিতে ফলাফল মূল্যায়ন সঠিক হবে না। পরবর্তী সময়ে বিধিবিধান ও আইনকানুন পর্যালোচনা করে কমিশন নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।
এর আগে দুপুর ১২টায় নির্বাচন কমিশনে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান সিইসি। সে সময় নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে কেন চলে গেল, সাংবাদিকদের এ রকম এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে অনেকটা। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আপনারাও দেখতে পাচ্ছেন। গোপন কক্ষে অন্যরা ঢুকছে, ভোট সুশৃঙ্খলভাবে হচ্ছে না। তবে কেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল, তা আমরা এখনো বলতে পারব না।’
দুপুর ১২টার দিকে নির্বাচন কমিশনে সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনে তিনি ব্যাপক অনিয়ম দেখেছেন। যেখানে অনিয়ম বেশি, সেখানে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে যাঁরা অনিয়ম করছেন, সে জন্য কী অ্যাকশন নেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, তাঁরা প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে পুলিশ, জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন।
ইভিএম নিয়ে অভিযোগ এসেছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, ‘ইভিএমের কোনো দোষত্রুটি দেখতে পাচ্ছি না। মানবিক আচরণের ত্রুটির কারণে এমনটা হচ্ছে।’ একই ধরনের প্রতীক দেওয়া গেঞ্জি পরে অনেককে ভোট দিতে দেখেছেন বলে জানান সিইসি। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এসব কাজ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তাঁরাই ভোটকেন্দ্রের ডাকাত কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, ‘এরাই ডাকাত। এরাই দুর্বৃত্ত। যাঁরা আইন মানেন না, তাঁদেরই আমরা ডাকাত বলতে পারি, দুর্বৃত্ত বলতে পারি। আমাদের সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নির্বাচন কমিশন এখানে বসে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারবে না।’
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮ জন। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত এ এইচ এম গোলাম শহীদসহ উপনির্বাচনে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ইভিএমের মাধ্যমে ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি বুথে ভোট গ্রহণ করার কথা ছিল।