আমদানি শুরু হলেও চট্টগ্রামের বাজারে সরবরাহ কম, কাঁচা মরিচের দাম এখনো চড়া
দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে দুই সপ্তাহ ধরে অস্থিতিশীল কাঁচা মরিচের দাম। চট্টগ্রাম নগরসহ আশপাশের উপজেলায়ও নিত্যপ্রয়োজনীয় এই কৃষিপণ্যের দাম অস্বাভাবিক ওঠানামা করছে। আমদানির খবরে গত সোমবার বাজারে কাঁচা মরিচের দাম কমে গিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে এর দাম।
গত মে মাস পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা উঠেছিল। তবে গত জুন মাসের শেষে তা ৫০০ টাকা ছুঁয়ে যায়। পবিত্র ঈদুল আজহার পর গত শনিবার সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। পরদিন রোববার বিভিন্ন বাজার ঘুরে কাঁচা দাম পাওয়া গিয়েছিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
মূলত খরা ও বৃষ্টির কারণে গাছ নষ্ট হওয়া ও আমদানি না থাকায় দাম বাড়ছে বলে তখন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন।
স্থলবন্দরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৬ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ১২ হাজার কেজি। তবে এরপরও চট্টগ্রামে পাইকারি পর্যায়ে দাম এখনো ৩৭০ টাকার বেশি।
রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, গতকাল বুধবার মরিচের কেবল দুটি ট্রাক
এসেছিল আড়তে। তিনি ৬ হাজার কেজি কাঁচা মরিচ পেয়েছেন। বিক্রি করেছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজিতে।
চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম
চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার পাইকারি আড়তগুলো থেকে নগরসহ আশপাশের উপজেলার খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ সরবরাহ করা হয়। আড়তদারেরা জানান, আমদানি হলেও চট্টগ্রামের বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম। যে পরিমাণ মরিচ এখন পর্যন্ত আমদানি হয়েছে, তা দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।
জানা গেছে, আগে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক কাঁচা মরিচ বাজারে আসত। প্রতিটি বড় ট্রাকে মরিচ আসে প্রায় ১০ হাজার কেজি। সে হিসাবে আগে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ কেজি কাঁচা মরিচ বাজারে ঢুকত।
গতকাল বুধবার দুটি ট্রাকে দেশীয় ও আমদানি মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার কেজি কাঁচা মরিচ বাজারে এসেছিল উল্লেখ করে রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী বলেন, দেশীয় মরিচের ফলন এবার নষ্ট হয়েছে খরা ও বৃষ্টির কারণে। তবে আমদানি বাড়তে থাকলে আর দেশে ফলন ভালো হলে দাম কমে যাবে।
নগর থেকে চকরিয়া উপজেলা পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা এই পাইকারি আড়ত থেকেই মরিচ সংগ্রহ করেন। তবে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে বর্তমানে কাঁচা মরিচের বেচাকেনা কমেছে।
বহদ্দারহাট বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, পাইকারি আড়তে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত মরিচ নেই। গতকাল প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ কিনতে হয়েছে ৩৭৭ টাকায়। এর সঙ্গে পরিবহন, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৪২০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।
ছয় মাসে দাম বেড়েছে পাঁচ গুণ
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নগরের খুচরা বাজারগুলোতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। গতকাল প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের খুচরা দাম ছিল ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে, অর্থাৎ ছয় মাসে খুচরায় কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে পাঁচ গুণ।
ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে পর্যাপ্ত তদারকি নেই সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর। জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জনবল সংকটের কারণে প্রতিদিন নগরের প্রতিটি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তবে অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বাড়তে থাকে মূলত গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে। সে সময় দাম খুচরা পর্যায়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়। তখন পাইকারি পর্যায়ে দাম ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। অথচ জুন মাসের শুরুতে ১০০ টাকার মধ্যে ছিল কাঁচা মরিচের দাম।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে। বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম থাকার কথা নয়। নিয়মিত তদারকির অভাবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।