‘মাইর দিব, দশটা খাইলে দুইটা তো দিতে পারব’

ট্রেনের জানালা দিয়ে মুঠোফোন নিয়ে দৌড় দেয় ছিনতাইকারী। মুঠোফোনের মালিক লাবনী আক্তার একটুও না ভড়কে ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করেন। অনেকটা দূর দৌড়ে মুঠোফোনটি উদ্ধার করে, ছিনতাইকারীকে পুলিশে দিয়ে আবারও ট্রেনে চেপে বসেন। গত বুধবার টঙ্গী রেলস্টেশনে এমন ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন ময়মনসিংহের এই নারী। পরে জানা গেল, তিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সোনাজয়ী কিক-বক্সার (বক্সিংয়ের একটি ধরন)। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বদিউজ্জামান

লাবনী আক্তার

প্রশ্ন :

ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে তো ভাইরাল হয়ে গেছেন?

লাবনী: আসলে ভাইরাল হয়ে এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। আমার এ ঘটনা দেখে একটি মেয়েও যদি সাহস করে এমন কাজ করে, সেটাও বড় কিছু হবে। তা ছাড়া আমার মনে হয়েছে কিক-বক্সিংয়ে যতটুকু অনুশীলন করেছি, সেটা এত দিনে কাজে লাগল।

প্রশ্ন :

মুঠোফোনটা কেড়ে নেওয়ার পর কি ভেবেছিলেন ফিরে পাবেন?

লাবনী: যখন ফোনটা হাত থেকে টান দিয়েছে, তখন যাব কি যাব না, সেটা নিয়ে এক সেকেন্ডও দ্বিধা করিনি। জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করেছি। কষ্ট হলেও তাকে ধরতে পেরেছি। এ ঘটনা থেকে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

প্রশ্ন :

আপনি তো একজন বক্সার। এর আগেও কি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন?

লাবনী: ফোন ছিনতাইয়ের পর উদ্ধারের মতো কোনো ঘটনা আমার ক্ষেত্রে ঘটেনি। তবে মার্কেটে (বিপণিবিতান) গিয়ে অনেক ঘটনা ঘটিয়েছি।

প্রশ্ন :

সেটা কেমন?

লাবনী: ধরেন কেউ পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়ে মানুষ দেখে ধাক্কা দিল। এটার তো কোনো দরকার ছিল না। তখন তাকে ধরে উত্তম-মধ্যম দিয়েছি।

প্রশ্ন :

এই যে ছিনতাইকারী ধরা, বিপণিবিতানে অন্যায় দেখে প্রতিবাদ করা, এত সাহস কোথায় পান?

লাবনী: যেহেতু প্রতিদিন অনুশীলনে আমাকে ‘ফাইট’ (লড়াই) করতে হয়, তাতে একধরনের আত্মবিশ্বাস পাই। তা ছাড়া বেশির ভাগ সময় ছেলেদের সঙ্গে ফাইট করি। আমার মধ্যে তাই কোনো ভয়ডর কাজ করে না। আমার কথা হচ্ছে, আমি মাইর দিব, দশটা খাইলে দুইটা তো দিতে পারব।

প্রশ্ন :

ছিনতাইকারীদের কাছে তো ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র থাকে। যদি আঘাত করত?

লাবনী: আসলে অনুশীলনে স্যার আমাদের আত্মরক্ষার কৌশল দেখিয়ে দেন। কেউ যদি ছুরি দিয়ে আঘাত করে তখন নিজেকে কীভাবে রক্ষা করব, সেটা স্যার শিখিয়ে দেন। তাই আমার মধ্যে কোনো ভয় কাজ করে না।

প্রশ্ন :

আপনি বক্সিংয়ের অনুশীলন কোথায় করেন?

লাবনী: ময়মনসিংহ জিমনেসিয়ামে (ব্যায়ামাগার)।

প্রশ্ন :

কিক-বক্সিং কেন বেছে নিলেন?

লাবনী: ছোটবেলা থেকে নাচ করতাম। বিয়ের পর স্বামী একরকম জোর করেই কিক-বক্সিং খেলতে পাঠান। তাঁর কথা, বর্তমানে যে প্রেক্ষাপট তাতে তোমার আত্মরক্ষার কৌশল জানা জরুরি। পরে ময়মনসিংহ জিমনেসিয়ামে গিয়ে স্যারদের সঙ্গে দেখা করে এই খেলায় ভর্তি হই।

প্রশ্ন :

জাতীয় প্রতিযোগিতায় সাফল্যের গল্পটা বলবেন?

লাবনী: ২০১৮ সালে সর্বশেষ জাতীয় প্রতিযোগিতায় ব্যানটামওয়েট (ফাইট) ও মিউজিক্যাল ফর্ম (প্রদর্শনী)—এই দুই ইভেন্টে সোনা জিতেছি। ওটা ছিল আমার প্রথম জাতীয় প্রতিযোগিতা।

প্রশ্ন :

বক্সিং গ্লাভস হাতে তুলে নিয়েছেন, তা–ও আবার সংসার সামলে। এটা কতখানি চ্যালেঞ্জের?

লাবনী: সবাই মনে করে, বাঙালি মেয়েরা সাজুগুজু করবে, চুড়ি পরে থাকবে, সংসার, বাচ্চাকাচ্চা সামলাবে। কিন্তু এটা ঠিক না। আমি সংসারও সামলাব। ফাইটও করব। আমাকে বক্সিং রিংয়ে ও রিংয়ের বাইরে সমানে লড়তে হয়। রিংয়ে নামলে লক্ষ্যই থাকে প্রতিপক্ষকে হারানো। আর রিংয়ের বাইরে অযথা মেয়ে মানুষ দেখে ধাক্কা দেবে, অহেতুক গায়ের ওপর এসে পড়বে, কেউ যদি এমন চিন্তাভাবনা নিয়ে আসে, তাহলে আমি কেন প্রতিবাদ করব না?