প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক হবে সম–অধিকারের ভিত্তিতে

জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ রোববার ‘সাম্প্রতিক বন্যা: কারণ ও করণীয়’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ঢাকাস্থ ফেনী সাংবাদিক ফোরামছবি: প্রথম আলো

প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতি নতজানু মনোভাব থেকে বেরিয়ে সম–অধিকারের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়তে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ এত দিন ভারতের কাছে পানির ন্যায্য হিস্যা চাইতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারকে ন্যায্য হিস্যা চাইতে হবে। একই সঙ্গে ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশনে দ্রুত অনুস্বাক্ষর করতে হবে।

আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকাস্থ ফেনী সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘সাম্প্রতিক বন্যা: কারণ ও করণীয়’ শিরোনামের বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকাস্থ ফেনী জেলা সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আদিত্য আরাফাত।

বৈঠকে আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা কখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করেনি বিগত সরকার। তবে এটা বোঝা যায়, ওই সব চুক্তিতে বাংলাদেশ লাভবান হয়নি, ভারত হয়েছে।

সম্প্রতি ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরে আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় জন্মস্থান ফেনীতে এত পানি দেখিনি। ভারত কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা না দিয়ে বাঁধ খুলে দিয়েছে। এ বিষয়ে দেশটি বাংলাদেশকে কোনো তথ্য দেয়নি। একটা দেশ নিজের ইচ্ছেমতো বাঁধ খুলে দিচ্ছে, আবার বন্ধ করে দিচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম হুমকিতে ফেলে দিয়েছে।’

সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে ভারতকে রেল, বন্দর, নদীসহ আরও যেসব সুবিধা দিয়েছে, তার মূল্য কখনো দেশটি থেকে চায়নি। ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকারকে বোঝাপড়া করতে হবে। আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে ভারতকে যেসব সুবিধা দিয়েছে, তা জনসম্মুখে আনতে হবে।

বৈঠকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফেনীতে এত বড় বন্যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট নির্মাণ, নদী দখল হয়েছে। এতে সাময়িক স্বস্তি মিলেছে। তবে ক্ষতি হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদে।

১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশনে বাংলাদেশকে অনুস্বাক্ষর করার পরামর্শ দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তির ৩০ বছর শেষ হতে যাচ্ছে। নতুন করে কীভাবে চুক্তি করা হবে, তা নিয়ে এখন থেকে চিন্তা করতে হবে। ফেনীতে বন্যার পর এখন স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা, সামাজিক সুরক্ষার ব্যাপ্তি বাড়ানো ও কৃষকদের সহায়তা করা জরুরি।

সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ বলেন, ভারত কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়া বাঁধ খুলে দেওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ফেনীতে বন্যার পানি নেমে গেছে। এখন পুনর্বাসন বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে মূল মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশবিজ্ঞানী আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ও রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশকে তার অতীতের নতজানু মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম–অধিকারের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ বজায় রেখে সম্পর্ক করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্যের মাধ্যমে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে।

প্রবন্ধে এবারের ভয়াবহ বন্যার জন্য বাংলাদেশকে কোনো রকম আগাম সতর্কবার্তা না দিয়ে ভারত বাঁধ বা ব্যারাজ খুলে দেওয়া, স্বল্প সময়ে অধিক বৃষ্টি, মুহুরী নদীর পাড় কেটে ফেলা, নদী দখল এবং মাছের ঘের তৈরি করে পানিপ্রবাহে বাধা দেওয়াকে দায়ী করা হয়।