নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস

আট মাস আগের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের তৎকালীন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) তাইজ ইবনে আনোয়ারসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা) পরিদর্শক আলমগীর হোসেন পাটোয়ারী।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদ মিয়া আজ বুধবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ২ জুলাই অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেওয়া হয়। ১৩ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির দিন রেখেছেন আদালত।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাইজ ইবনে আনোয়ারসহ বাকি ১৯ জনকে পলাতক দেখানো হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে পুলিশ। এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের মধ্যে মো. মাসুদ (৩৪) ও জাহাঙ্গীর আলম (৩৬) নামের দুজনের জবানবন্দিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসে ডিজিএম তাইজ ইবনে আনোয়ারের নাম আসে। মাসুদ সে সময় তাইজ ইবনে আনোয়ারের গাড়িচালক ছিলেন। আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এমটি অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম আগে তাঁর গাড়ি চালাতেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন উপমহাব্যবস্থাপক মেজর তাইজ ইবনে আনোয়ার। তিনি প্রেষণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ডিজিএমের (নিরাপত্তা) দায়িত্ব পালন করছিলেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, তাইজ ইবনে আনোয়ার নিয়োগ পরীক্ষার একটি প্রশ্নপত্রের খসড়ার ছবি প্রিন্ট করে আসামি মাসুদ ও জাহাঙ্গীর আলমের কাছে পাঠান। পরে তা আসামি জাহাঙ্গীর আলম, হারুন অর রশীদ, এনামুল, মাহফুজুল আলম ও আওলাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।

গত বছরের ২১ অক্টোবর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ১০টি পদের লিখিত পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে বিমান কর্তৃপক্ষ পরীক্ষাটি স্থগিত ঘোষণা করে।

এ ঘটনার পর মেজর তাইজ ইবনে আনোয়ারকে মূল বাহিনীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আজ রাতে টেলিফোনে তাইজ ইবনে আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

আরও পড়ুন

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এমটি অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম, মাসুদ, তাইজ ইবনে আনোয়ারসহ অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট তৈরি করেন। এর মাধ্যমে বিমানে নিয়োগপ্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করে আসছিলেন।

এমটি অপারেটর জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে পাওয়া তিনটি ডায়েরির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিমানের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে জাহাঙ্গীর, মাসুদ ও তাইজ ইবনে আনোয়ার নিজেদের মধ্যে বণ্টন করেছেন, সেই প্রমাণ পাওয়া গেছে। একটি ডায়েরিতে ২৪ লাখ টাকা কথিত স্যারকে দেওয়ার তথ্য উল্লেখ রয়েছে।

আসামি জাহাঙ্গীর, মাসুদের সঙ্গে তাইজ ইবনে আনোয়ারের মুঠোফোনের কথোপকথনের তথ্য অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে আছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এমটি অপারেটর মাহফুজুল আলম (৩১), ফিরোজ আলম (৩২), মিজানুর রহমান (৪০), ফারুক হোসেন (৪৮), নজরুল ইসলাম (৪২), মহসিন আলী (৪৪), মাহাবুব আলম (৪৮), মাহবুব আলী (৩৪), এনামুল হক (২৮), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) এমএলএসএস মো. জাহিদ হাসান (২৮), সমাজু ওরফে সোবাহান (৩০), জাকির হোসেন (৩০), আল আমিন (৩০), তাপস কুমার মণ্ডল (৩১) ও হারুন অর রশীদ (৪০), বিএফসিসি অপারেটর সুলতান হোসেন (৪৪), অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন (২৯) ও জাবেদ হোসেন (২৯), নিরাপত্তারক্ষী আইয়ুব উদ্দিন (৫৪), ট্রাফিক সহকারী আবদুল্লাহ শেখ (২৬), আবদুল মালেক (৩০) ও আলমগীর হোসেন (২৮), চালক (আউটসোর্সিং) সাজ্জাদুল ইসলাম (২৪), মুরাদ শেখ (৩৭), ফারুক হোসেন, জুয়েল মিয়া (২৭) ও রাজিব মোল্লা (২৯)।

আরও পড়ুন