ছাত্রলীগের তিন নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে মারধর করার আগে বারডেম হাসপাতালে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছিল। সেই ঘটনা তুলে ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন সেখানকার এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা। সেই চিঠিতে বলা হয়, বারডেমের ইটিটি রুমের সামনে সেদিন মারামারি হচ্ছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওয়ারেছ আলী দুই পক্ষকে অনুরোধ করে মারামারি থামান। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ এসে দুই পক্ষকেই থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনার পরদিন রোববার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঘটনা সম্পর্কে অবগত করে চিঠি দেন সিকিউরিটি সুপারভাইজার ওয়ারেছ আলী। তিনি চিঠিতে লেখেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে আসা একদল দর্শনার্থী ইটিটি (একধরনের শারীরিক পরীক্ষা) কক্ষের সামনে মারামারি করেন। হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন করে এসে তিনি এই মারামারি দেখতে পান। দুই পক্ষকে অনুরোধ করে তিনি মারামারি থামাতে সমর্থ হন।
চিঠিতে ওয়ারেছ আলী বলেন, মারামারিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে, প্রথমে তাঁরা পরিচয় জানাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে অনুরোধ করলে তাঁরা পরিচয় দেন। এতে জানা যায়, একজন রাষ্ট্রপতির এপিএস (একান্ত সহকারী সচিব আজিজুল হক) এবং অন্যজন হচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা (বরখাস্ত হওয়া রমনা অঞ্চলের এডিসি হারুন অর রশিদ)। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রমনা ও শাহবাগ থানার পুলিশ এসে তাঁদের নিয়ে যায়।
রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের সঙ্গে পুলিশের রমনা বিভাগের বরখাস্ত এডিসি হারুন অর রশিদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত শনিবার ছাত্রলীগের তিন নেতাকে থানায় এনে মারধর করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শাহবাগ থানায় ওসির (তদন্ত) কক্ষে এই মারধরে নেতৃত্ব দেন এডিসি হারুন। তবে ঘটনার সূত্রপাত হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে মারধর ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করার ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে এপিএস আজিজুল হকের স্ত্রী ঢাকা মহানগর পুলিশের এডিসি (অতিরিক্ত উপকমিশনার) সানজিদা আফরিন বলেছেন, তিনি চিকিৎসা নিতে সেদিন বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে সানজিদা সহকর্মী হিসেবে এডিসি হারুন অর রশিদের সহায়তা নেন। কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসে এডিসি হারুনকে মারধর করেছেন তাঁর স্বামী আজিজুল।
সেদিন বারডেমে কী হয়েছিল তা জানতে আজ বুধবার দুপুরে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের চতুর্থ তলার ইটিটি কক্ষে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তবে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তাঁরা। হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগের সহকারী পরিচালক কামরুল হাসানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন দর্শনার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এসে যাঁরা মারামারি করেছেন, তাঁদের নিয়ে যায়। পরদিন গণমাধ্যমের সংবাদ দেখে তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারেন বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে সিকিউরিটি সুপারভাইজার ওয়ারেছ আলীকে পাওয়া যায়নি। দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাঁর মুঠোফোন নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানায়।