দুদক থেকে শরীফের চাকরিচ্যুতি কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট

মো. শরীফ উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক পদ থেকে মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাদিসহ তাঁকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

চাকরিচ্যুতির বৈধতা নিয়ে শরীফের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রুল দেন। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি রুল শুনানির জন্য ২১ এপ্রিল দিন রেখেছেন আদালত।

প্রায় দুই বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ ওই রিটটি করেন।

রিটের শুনানিতে এর আগে ৫৪(২) বিধির ক্ষমতাবলে দুদকের আরেকজন কর্মকর্তাকে (মো. আহসান আলী) চাকরিচ্যুতি নিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগে রয়েছে বলে আদালতে তুলে ধরা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৫ মে হাইকোর্ট ওই আপিলের (দুদকের আপিল) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ৫৪ (২) ধারায় চাকরিচ্যুতির বৈধতা নিয়ে শরীফের করা রিটের শুনানি মুলতবি করেন।

এই আদেশ স্থগিত চেয়ে ২০২২ সালের ১৬ জুন আপিল বিভাগে শরীফ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। মো. আহসান আলীর করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৫৪(২) বিধি বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিলের সঙ্গে শরীফের করা লিভ টু আপিল গত মার্চে একসঙ্গে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৬ মার্চ আপিল বিভাগ দুদকের করা আপিল মঞ্জুর করে রায় দেন। ওই বিধিটি বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয়। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে শরীফ উদ্দিনের করা লিভ টু আপিলটি প্রয়োজনের বাড়তি বলে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুন

গত বছরের ২১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) বিধিটি সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এই পর্যবেক্ষণসহ বিধিটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুদককে ১২ দফা পর্যবেক্ষণ বা গাইডলাইন অনুসরণ করতে বলা হয়।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর শরীফের করা রিটটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়। এরপর এটি কার্যতালিকায় আসে। আদালতে শরীফের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক এবং এস এম মাহিদুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।

আরও পড়ুন

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুসারে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে ৫৪(২) বিধি প্রয়োগ করতে হবে। দুদকের কর্মকর্তারা যেহেতু প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত করেন, তাই সর্বশেষ পন্থা হিসেবে এটি প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমে বিভাগীয় কার্যধারার মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে। শরীফের বিরুদ্ধে তিনটি বিভাগীয় মামলা বিচারাধীন ছিল। এ অবস্থায় ৫৪(২) ধারায় তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বিধিটি সংবিধানের ২৯ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। এখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই। তাই বিধিটি শরীফের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা ঠিক হয়নি—শুনানিতে বলেছি।’