স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য বাইরে থেকে একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে রাঙামাটিতে বিশেষ আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ মন্তব্য করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ (অব.) উপস্থিত ছিলেন।
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে গত তিন দিনের উত্তেজনা ও সংঘর্ষে চারজন নিহত এবং দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর উপদেষ্টারা দুই জেলা পরিদর্শনে যান। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের তবলছড়ি এলাকার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সেক্টর হেলিপ্যাড মাঠে হেলিকপ্টারে উপদেষ্টারা পৌঁছান। বেলা একটার দিকে রাঙামাটি সেনা রিজিয়নের প্রান্তিক মিলনায়তনে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়া রাঙামাটির বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, ব্যবসায়ী নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে সাংবাদিকদের হাসান আরিফ বলেন, ‘আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা একটা বার্তা দিতে চাই। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে থাকব। এ বিষয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমরা সকলেই শান্তি চাই।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও সভা শেষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এই যে ঘটনাটি ঘটছে, এ জন্য আমরা একটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করব। এটা নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করার পর, তা গঠন করব।’
মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো অবস্থায় অবনতি হতে দেওয়া যাবে না। আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা চাচ্ছি। যারা আইনশৃঙ্খলার অবনতি করতে চাচ্ছে, তাদের কোনো অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে যদি তারা আবার আইনশৃঙ্খলার অবনতির চেষ্টা করে, তাহলে তাদের হাত ভেঙে দেব।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা যেন উন্নতি হয়, আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা যে বাহিনীগুলো রয়েছে, তাদের সহযোগিতা করবেন। প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। জনগণকে বোঝাবেন যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অটুট থাকে এবং ভালো থাকে। আস্তে আস্তে যেন আরও উন্নতি হয়। সব সময় আমাদের পাশে আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।’
সভায় উপদেষ্টাদের পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম, চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়, সাবেক সংসদ সদস্য ও জনসংহতি সহসভাপতি উষাতন তালুকদার, বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। রাঙামাটির পর উপদেষ্টারা খাগড়াছড়ি যান।
দীঘিনালা উপজেলায় সংঘর্ষের জেরে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় তিনজন নিহত হন এবং আহত হন অন্তত ১৫ জন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল ত্রিপুরা (৩০)।
আগের দিনের ঘটনার জেরে গতকাল শুক্রবার খাগড়াছড়ির পাশাপাশি রাঙামাটিতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খাগড়াছড়িতে তিন পাহাড়ির মৃত্যু ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সকালে রাঙামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন পাহাড়িরা। মিছিলে ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ ৩০ থেকে ৪০টি বাড়িঘর, দোকানপাটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। প্রথম আলোর রাঙামাটি প্রতিনিধি সাধন বিকাশ চাকমার মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের অন্তত ৩০টি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে অনীক চাকমা নামের এক তরুণ নিহত এবং আহত হয়েছেন দুই পক্ষের অন্তত ৫৫ জন। গতকাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।