যানবাহন ও মানুষের চলাচলের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্মুক্ত করার দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত করার আকস্মিক সিদ্ধান্তে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় জনমনে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে যানবাহন ও মানুষের চলাচলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে বৈঠকে এই দাবি জানান। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ ছিলেন। অন্যদিকে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, কামরুল হাসান মামুন, সামিনা লুৎফা, মারুফুল ইসলাম, কামাল আহমেদ চৌধুরী, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, রুশাদ ফরিদী, মোশাহিদা সুলতানা, কাজলী সেহরীন ইসলাম, দীপ্তি দত্ত ও মারজিয়া রহমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাইরের মানুষের ভিড় কমাতে ১৩ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে যানবাহন ও বহিরাগতদের চলাচল সীমিত করতে সাতটি প্রবেশপথে ব্যারিকেড দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার, শনিবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোয় বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা এবং অন্যান্য দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ও জরুরি সেবা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ ঠেকানোর নির্দেশনা দেয়।
এই নির্দেশনা বেশ কঠোরভাবেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে ক্যাম্পাসে ভিড় কমে আসায় বর্তমান শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট। তবে ক্যাম্পাসের সড়ক বন্ধ থাকায় আশপাশের অন্য সড়কগুলোয় তীব্র যানজট তৈরি হওয়ায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ দেখিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এমন প্রক্ষাপটে যানবাহন ও মানুষের চলাচলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানাল শিক্ষক নেটওয়ার্ক। উপাচার্যের কাছে তারা আরও দুটি দাবি জানিয়েছে। এগুলো হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা এবং সিন্ডিকেট, সিনেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের বিষয়সহ অন্যান্য যেকোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত করার আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেয়, তা জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জনমনে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে।...আমাদের মনে রাখা দরকার যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এক ঐতিহাসিক জনপরিসর। ২০২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানসহ প্রায় সব জাতীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলন এখানেই শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নানা সভা-সেমিনারসহ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রাণকেন্দ্রও এই বিশ্ববিদ্যালয়।...সিটি করপোরেশনের যে রাস্তাগুলো ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে চলে গেছে, সেগুলোয় যান চলাচল ক্যাম্পাসের বাইরের নাগরিকদের অধিকার।
বৈঠকে আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের চারদিকের সড়কগুলোর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য শিক্ষক নেটওয়ার্ক প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বৈঠকে আলোচনায় টিএসসি এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় প্রশাসন দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। ৩১ ডিসেম্বর চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘটা ‘অন্যায় পুলিশিংয়ের’ কথা উল্লেখ করে প্রক্টরিয়াল টিমের কর্মপরিধি নিয়েও সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বলা হয়, প্রক্টরকে তাঁর কর্মপরিধির মধ্যে থাকতে এবং প্রতিশোধমূলক বা পক্ষাপাতকারী আচরণ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।