মারধর, ভয়ভীতি ও হুমকির অভিযোগে নিজ দলের এক আইনজীবীর করা মামলায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালসহ ১০ আইনজীবী ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন। আগাম জামিন চেয়ে তাঁদের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
জামিন আবেদনের শুনানি থাকায় মধ্যাহ্নবিরতির পর বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামালসহ ১০ জন আদালতে হাজির হন। তাঁদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ ও সুজিত চ্যাটার্জি। আদালত ওই মামলার বাদী আইনজীবী কাজী মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের বক্তব্যও শোনেন।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, শাহবাগ থানায় করা ওই মামলায় কায়সার কামালসহ ১০ জনকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে তাঁদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনজীবী হয়ে পেশি শক্তি ব্যবহার করলে এখানকার পরিবেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াল—শুনানিতে এমন প্রশ্ন রাখেন আদালত।
জামিন পাওয়া অপর ৯ আইনজীবী হলেন শাহের খান পাঠান, এরশাদ ওরফে রাশেদ, উজ্জ্বল, আবদুল্লাহ আল মাহবুব, উজ্জ্বল, গাজী তৌহিদুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম সপু, মাকসুদ উল্লাহ ও শহীদুজ্জামান।
মামলার বাদী কাজী মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সমিতির ওই নির্বাচনে (২০১৮–১৯) অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। কাজী জয়নাল বর্তমানে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলএলএম ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডুলা) সম্পাদক।
মারধর, ভয়ভীতি ও হুমকির অভিযোগ
আইনজীবী কায়সার কামালকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে এবং ৯ আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫–৬ জনকে আসামি করে কাজী জয়নাল শাহবাগ থানায় ৫ ফেব্রুয়ারি ওই মামলাটি করেন।
বাদীর বর্ণনামতে অভিযোগে বলা হয়, গত ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ নম্বর আসামিসহ উল্লেখিত সহযোগীরা সারা বাংলাদেশে আদালত বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। গত ৩ জানুয়ারি জরুরি একটি মামলার খবর নেওয়ার জন্য বাদী সুপ্রিম কোর্টের বিজয়–২৯ নম্বর কোর্টে যান। এর সূত্র ধরে ১ নম্বর আসামি অন্যান্য আসামিদের নিয়ে আইনজীবী ফোরামে বাদীর কোনো পদ না থাকা সত্ত্বেও তাঁর সমাজিক ও পেশাগত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য তাঁকে ফোরাম থেকে বহিষ্কার করেন। ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে ১ নম্বর আসামির কাছে বাদী জানতে চান ওই সংগঠনে (ফোরাম) বাদীর পদ না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে বহিষ্কার করে কী মজা পেলেন? তখন তিনি (কায়সার কামাল) বাদীকে ধমক দেন এবং পাশে থাকা অনুসারীদের বাদীকে ধরার জন্য বলেন। তখন বাদী ওই স্থান থেকে কোনোমতে চলে আসেন।
বাদীর অভিযোগের ভাষ্যমতে, একই দিন (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাদী সমিতি ভবনে নিজের কক্ষে অবস্থান করার সময় ১ নম্বর আসামির নির্দেশে অপর আসামিরা বাদীকে ডেকে সমিতির মূল ভবনের ৪০৯ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। উল্লিখিত ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে থাকা অবস্থায় ১ নম্বর আসামির (কায়সার কামাল) নির্দেশে ২ নম্বর আসামি (শাহের খান পাঠান) বাদীর মুখে ঘুষি মারেন। কারণ জানতে চাইলে ৩ নম্বর আসামি (এরশাদ ওরফে রাশেদ) বাদীর বাঁ চোখের নিচে লোহার চেয়ার দিয়ে সজোরে আঘাত করে কাটা জখম করেন।
ওই ঘটনার সময় বর্ণিত আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা বাদীকে নির্দয়ভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রহার করে থেঁতলানো জখম করে ৪০৯ নম্বর কক্ষের মেঝেতে ফেলে দেন ও বাদীকে প্রাণনাশের ভয়ভীতি ও হুমকি দেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়, এ ঘটনা চলতে থাকা অবস্থায় আসামিরা বাদীর প্যান্টের পকেটে থাকা ১০ হাজার ৫৭৫ টাকাও নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে বাদীর চিৎকারে আশপাশের কক্ষের লোকজন এসে বাদীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
এক মাস আগে ‘অব্যাহতি’
এর আগে ৪ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দপ্তর সম্পাদকের সই করা এক চিঠিতে কাজী জয়নালকে ফোরাম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানানো হয়।
কাজী জয়নালের উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।...অতি সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত ১ থেকে ৭ জানুয়ারি আদালত বর্জন কর্মসূচিতে আপনার কার্যক্রম সরাসরি দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে ফোরামের প্রাথমিক পদ থেকে আপনাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।