ডলার–সংকটের কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভের অংশ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। এ অর্থ বাংলাদেশ থেকে কবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, তা জানতে চেয়েছেন ঢাকা সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের গুলশানের বাসভবনে মঙ্গলবার রাতে নৈশভোজে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ডোনাল্ড লু।
নৈশভোজ শেষে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সালমান এফ রহমান। এ সময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, ডলার-সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, ‘মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো যারা ব্যবসা করছে, তারা অভিযোগ করছে, তাদের অর্থছাড়ে দেরি হচ্ছে। তাঁরা এটাও বলেছেন, আমরা বুঝি বাংলাদেশের রিজার্ভের ওপর চাপ রয়েছে।’ বাংলাদেশ কত দিনে এ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে, তা জানতে চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আশাবাদী বাংলাদেশের রিজার্ভ বাড়বে। আমাদের রপ্তানি বাড়বে, রেমিট্যান্সও বাড়বে। মার্কিনদের জানিয়েছি যে যদিও আমাদের অর্থ পরিশোধে একটু সমস্যা হচ্ছে, একটু দেরি হচ্ছে, তবে আমাদের অর্থছাড় ক্রমাগত হচ্ছে। আমরা একেবারে অর্থছাড় বন্ধ করিনি।’
ফিলিস্তিন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনের বিষয়টিতে অনেক উদ্বিগ্ন। মার্কিনরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ যেমন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায়, যুক্তরাষ্ট্রও তা চায়। সংকট সমাধানের দিকে যাচ্ছে বলে তাঁরা ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু সমাধানটি কী, তা বিস্তারিত জানাননি।
চীন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ভিসানীতি নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
আলোচনার অগ্রাধিকার নিয়ে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘মার্কিনরা জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশও এ বিষয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছে। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ভুল–বোঝাবুঝি ছিল, তা আলোচনায় মার্কিনরাও তোলেনি, আমরাও তুলিনি। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বিশ্বাস পুনরায় স্থাপন করতে চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম নিয়ে যে পথনকশা রয়েছে, সেটি মেনে শ্রমনীতি ও আইনটি করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো আপত্তি থাকবে না।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, র্যাবের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, এ দুটি বিষয় আইন দপ্তরে রয়েছে।
ডোনাল্ড লু এর আগে ঢাকা সফরে জানিয়েছিলেন, র্যাবের উন্নতি হয়েছে। ফলে পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। র্যাবের উন্নতি হয়েছে তা আইন দপ্তরকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর।
বিএনপি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না—এ প্রশ্নে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, বিএনপি, বিরোধী দল, রাজনীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন—এগুলো কোনো কিছু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলাপ তোলা হয়নি। এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।