মুখে কালো কাপড় বেঁধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা বলেছেন, সাংবাদিকেরা আজ যখন মেহনতি মানুষের কষ্টের কথা পত্রিকায় লিখছেন, তখন ডিজিটাল আইনের মতো ‘কালাকানুনের’ মাধ্যমে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
মুখে কালো কাপড় বেঁধে দেশে ‘কথা বলার অধিকার হরণের’ প্রতিবাদ ও লাল কার্ড দেখানোর মাধ্যমে ‘বাক্স্বাধীনতাবিরোধী’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে প্রত্যাখ্যান করেন পরিষদের নেতারা।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এই লাল কার্ড দেখানো হয়।
ছাত্র অধিকারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচি থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিল, এই আইনে বন্দী সব রাজনীতিক ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত মুক্তি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।
কর্মসূচির শুরুতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে লাল কার্ড দেখানো হয়। এরপর শুরু হয় বক্তব্য দেওয়ার পালা।
পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ আজকে মাছ-মাংস ও চাল-ডালের স্বাধীনতা চায়, আর ক্ষমতাসীনেরা চায় লুটপাট-চুরির স্বাধীনতা। আজ যখন সাংবাদিকেরা মেহনতি মানুষের কষ্টের কথা লিখছেন, তখন তাঁদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালাকানুনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
বিন ইয়ামিন দাবি করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাড়ে চার বছরে দেশে প্রায় ২ হাজার ৮০০ মানুষকে বন্দী করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকলেও তাঁদের জামিন হচ্ছে না। এই আইন এমন একটি অস্ত্র; যা দিয়ে সাংবাদিক-রাজনীতিকসহ প্রতিবাদী মানুষদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বিবেক বিক্রি হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিন ইয়ামিন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রথম আলোর বিরুদ্ধে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, কর্মসূচি পালন করছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমর্থনে তাঁরা কর্মসূচি পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি লজ্জিত।’
ছাত্র অধিকারের সভাপতি আরও বলেন, ‘আমাদের উপাচার্যও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সেই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাঁর উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা জাতির বিবেক, আপনারা বিক্রি হবেন না, দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না।’ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্যাতন বন্ধের দাবিও জানান বিন ইয়ামিন মোল্লা।
পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্ত গণমাধ্যম ও বাক্স্বাধীনতার মাধ্যমে সরকার ও প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার কালাকানুন করে দেশকে উত্তর কোরিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য অশনিসংকেত। স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি সংবাদকে কেন্দ্র করে সরকার আজ প্রথম আলোকে চেপে ধরেছে। এর মাধ্যমে অন্যান্য গণমাধ্যমকে এ বার্তা দিতে চায় যে প্রথম আলোর মতো একটি প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমকে আমরা ছাড় দিচ্ছি না; তাহলে তোমাদের আরও বেশি চেপে ধরা হবে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে শুধু সাংবাদিক নন, বিরোধী দল-মত সবাইকেই চেপে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে আরিফুল ইসলাম বলেন, অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ, মুক্ত গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে এই আইন বাতিলে সবাইকে আন্দোলনে শামিল হতে হবে। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাংলাদেশের নাগরিকেরা সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় থাকেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও ছাত্র অধিকারের সহসভাপতি আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এটি জনগণের নিরাপত্তা ধ্বংসকারী আইন। এ আইন বাতিল করতে হবে। এ আইনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এ আইনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খানের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে পরিষদের নেতা তারেকুল ইসলাম, নেওয়াজ খান, আসাদ বিন রনি, কাওসার আলী বক্তব্য দেন।