অবশেষে পদ ছাড়লেন ওয়াসার এমডি তাকসিম

তাকসিম এ খানফাইল ছবি

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান পদত্যাগ করেছেন। তিনি গতকাল বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

এমডির স্টাফ অফিসার ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম আজ বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাকসিম এ খান পদত্যাগ করেছেন। গতকাল তিনি মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই খোঁজ ছিল না তাকসিমের। এরপর এক দিনও নিজের দপ্তরে আসেননি। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে চলে গেছেন, সেটিও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

তাকসিম এ খান, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কারণে শেখ হাসিনা সরকারের আস্থাভাজন তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। ইতিমধ্যে তাকসিমকে অবিলম্বে পদত্যাগ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভও করেছেন ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর দফায় দফায় তাঁর মেয়াদ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে সপ্তমবারের মতো ওই পদে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও তাকসিমকে একই পদে দীর্ঘ সময় রাখা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ২০০৯ সালের পর থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ে ১৬ বার।

গত ১৫ বছরে ঢাকা ওয়াসায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তাকসিম এ খান। ওয়াসার আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে পরিচালনা করেছেন তাকসিম। এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে। এতে তাকসিমের কিছুই হয়নি। বরং তাঁর অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ায় সরে যেতে হয় সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে।

আরও পড়ুন

তাকসিম এ খানের আমলে ঢাকা ওয়াসায় বৈদেশিক ঋণের টাকায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর ফলে ঢাকা ওয়াসাকে ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পে ঢাকা ওয়াসার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং বাস্তবায়নের পর তা চালু করতে না পারার মতো কারণে সংস্থাটির ব্যয় বেড়েছে।

ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে তাকসিমের মাসিক বেতন বর্তমানে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয় পৌনে দুই লাখ টাকা।

আরও পড়ুন

ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বহু অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলমান ও মামলার সুপারিশ রয়েছে। তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। তিনি যেকোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন।