বিটিভির কর্মকর্তারা ‘সৃজনশীল নন’, শিল্পীদের কালোতালিকাভুক্ত করা নিয়ে ক্ষোভ

‘৬০ বছরে বিটিভি, ডুবছে বিটিভি, বাঁচাও বিটিভি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন শিল্পীরা। আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবেছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) জনগণের করের টাকায় পরিচালিত একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। অথচ প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সৃজনশীল নন। একটা ভালো অনুষ্ঠান বানাতে পারেন না। তাঁদের একমাত্র কাজ চুরি করা। আজ রোববার ‘৬০ বছরে বিটিভি, ডুবছে বিটিভি, বাঁচাও বিটিভি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন বরেণ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান।

সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সংস্কৃতি ও শিল্পী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সেখানে বক্তারা বলেন, বিটিভি একসময় ছিল লাভজনক ও দর্শকপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুর্নীতিতে ধ্বংস হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বিটিভিকে বাঁচাতে সংস্কার কমিটি গঠন করার পাশাপাশি তালিকাভুক্ত শিল্পীদের সম্মানী শতভাগ বাড়ানোর দাবি জানান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে মূল দাবিগুলো তুলে ধরেন পরিষদের সদস্যসচিব শিল্পী পলাশ কুমার সাউ। তিনি তাঁর ‘৬০ বছরের বিটিভি, ১৭ বছরে ডুবছে, বাঁচাও বিটিভি’ শীর্ষক প্রবন্ধে বিটিভিতে বিগত কয়েক বছরের আর্থিক অনিয়মের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে শিল্পীদের ১২টি পরামর্শ মানতে হবে। এর মধ্যে বিটিভির দুর্নীতি ঠেকাতে সংস্কার কমিশন গঠন, শিল্পী সম্মানী নির্ধারণ, বিটিভির সিন্ডিকেট ভাঙতে তদন্ত ও আইনিব্যবস্থা, স্বচ্ছভাবে শিল্পী তালিকাভুক্ত করাসহ আরও বেশ কিছু পরামর্শ রয়েছে।

নজরুলসংগীতশিল্পী সুজিত মোস্তফা বলেন, বিশ্বের সব গণমাধ্যম, প্রচারযন্ত্র যখন বাণিজ্যিক চাহিদা তৈরি করছে, তখন বিটিভি নিজের সেই অর্জন হারিয়েছে। অতীতে বিটিভির জনপ্রিয়তার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিটিভির জন্য স্বচ্ছ পরিকল্পনা চাই। বিটিভির বাজেট প্রকাশ করা হোক। দেশের সংকটে শিল্পীরাই প্রথম গলায় হারমোনিয়াম বেঁধে ঝাঁপ দেন। সেই শিল্পীরা ইন্টারনেট কালচারের সঙ্গে দৌড়ে হয়রান হচ্ছেন। রাষ্ট্রের উচিত শিল্পীদের রক্ষা করা। সব দেশেই শিল্পীদের জন্য বাজেটের অন্তত ৪ শতাংশ বরাদ্দ হয়, কিন্তু বাংলাদেশে তা ১ শতাংশের অনেক কম বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে শেখ সাদী খান বলেন, শিল্পীদের কালোতালিকাভুক্ত করার নিয়ম কোথা থেকে আসে? শিল্পীদের কেমন করে নিষিদ্ধ করা সম্ভব? ১৯৬৭ সাল থেকে বিটিভির সঙ্গে রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের করের টাকায় এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। অথচ এর অধিকাংশ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সৃজনশীল নন। একটা ভালো অনুষ্ঠান বানাতে পারেন না, তাঁদের একমাত্র কাজ চুরি করা।

অসুস্থতার জন্য উপস্থিত না হতে পারলেও হাতে লেখা চিঠি পাঠিয়ে এ আয়োজনে শিল্পীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন বরেণ্য শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। শিল্পী শেখ জসিম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রামপুরায় বিটিভি ভবনে আগুনের ঘটনায় ক্ষতির বিবরণ সন্দেহজনক। কর্তৃপক্ষের একাংশ তাঁদের দুর্নীতি ঢাকতে নিজেরাই আগুন দেন। তা না হলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নথি কোথায় থাকে, তা বেছে বেছে বের করার কথা না অগ্নিসংযোগকারীদের। বিটিভির বর্তমান প্রশাসনের দুর্বলতা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, নতুন নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা আন্দোলনের ফলেই দায়িত্ব পেয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের কণ্ঠসৈনিক শিল্পী তিমির নন্দী বলেন, শিল্পীদের সম্মান কতুটুকু তা তাঁদের সম্মানীর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব আন্দোলনেই শিল্পীরা থাকেন। কতটা দুর্ভাগা আমরা যে এ দেশে একজন ওস্তাদের মৃত্যুর আগে নিজের প্রিয় হারমোনিয়ামটি বিক্রি করে দিয়ে চিকিৎসা করতে হয় অথচ সে দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিটিভিতে শিল্পীরা কালোতালিকাভুক্ত হন আর বিটিভিতে চলে চুরি। সংবাদ সম্মলেন আরও বক্তব্য দেন শিল্পী মুজিব পরদেশী, মিলন ভট্টাচার্য, হাসেন উদ্দিন, ইফতেখার হোসেন।