এলাকাভেদে কোন ফ্ল্যাটের কেমন দাম

ধরুন, আপনি ঢাকার অভিজাত বা ব্যস্ততম কোনো এলাকায় কাজে বা ঘুরতে গেলেন। দেখলেন নতুন নির্মিত সুউচ্চ ইমারত, কমবেশি সবগুলোতেই লেখা ‘ফ্ল্যাট ফর সেল’। অথবা ভাড়া নেওয়ার জন্য বাসা খুঁজতে গেছেন, সেখানেও ‘টু-লেট’ থেকে ‘ফ্ল্যাট বিক্রি’র বিজ্ঞাপনই বেশি। এ রকম সাইনবোর্ডে চোখ পড়লে মনের অজান্তেই একটা প্রশ্ন আসে ‘এ ফ্ল্যাটের দাম কেমন’? বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এবং ফ্ল্যাট কেনাবেচা প্রতিষ্ঠানের তথ্যানুসারে এলাকাভেদে ফ্ল্যাটের দাম কেমন, সেটাই জানা যাক।

২০১০ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ বছরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭ শতাংশ বা ২২ হাজার ৮৭৬টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে গুলশানে। বৈশ্বিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিসার্চ ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণের দিক থেকে গুলশানের পরের অবস্থানে রয়েছে ধানমন্ডি, সেখানে তৈরি হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৪টি ফ্ল্যাট। এরপর যথাক্রমে মোহাম্মদপুরে ১৪ হাজার ৮০২টি, মিরপুরে ১২ হাজার ১১১টি, বনানীতে ৮ হাজার ৭৪টি এবং উত্তরায় ৬ হাজার ৭২৮টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে।

কিসের ওপর নির্ভর করে ফ্ল্যাটের দাম

ফ্ল্যাটের উচ্চমূল্যের জন্য মানুষের চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকা, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং জমির আকাশছোঁয়া দামকে সামনে আনেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। কারণ, যেসব এলাকায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভালো, সেসব এলাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। যেমন মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর মিরপুরে ফ্ল্যাটের চাহিদা বেড়েছে। ফলে ফ্ল্যাটের দামও বাড়ছে। এ ছাড়া ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট নির্মিত হয়েছে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা, লালমাটিয়া, মিরপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কলাবাগান, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, মণিপুরিপাড়া, গ্রিন রোড, এলিফ্যান্ট রোড ও সেগুনবাগিচায়।

গত দুই দশকের চিত্র

২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে আরআইআই দাবি করে, ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের গড় দাম ১৪৩ দশমিক ৩১ মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে)। এই দামে ১ হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাটের দাম দাঁড়ায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যেখানে ১৯৯০ সালে ঢাকায় ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৬৯২, ২০০০ সালে ২ হাজার ৫৯ এবং ২০১০ সালে ছিল সাড়ে ১০ হাজার টাকা। তারপর চাহিদার তুলনায় ফ্ল্যাটের জোগান বেশি হওয়ায় দাম কমে যায়। ফলে ২০১৫ সালে ঢাকায় ফ্ল্যাটের গড় দাম ছিল ৯ হাজার ৯১ টাকা।

২০০০ সালে মিরপুরে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। এখন মিরপুরে প্রতি বর্গফুট ৭ হাজার টাকার নিচে ফ্ল্যাট পাওয়া কঠিন। অবশ্য মিরপুরের চেয়ে ফ্ল্যাটের দাম বেশি বেড়েছে বারিধারা, গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী ও লালমাটিয়া এলাকার। ২০০০ সালে গুলশানের ফ্ল্যাটের গড় দাম ছিল সবচেয়ে বেশি, ২ হাজার ৪৫০ টাকা। বর্তমানে অভিজাত এই এলাকার প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে ১৮ হাজার থেকে ৩৬ হাজার টাকায়। গুলশানের পর ধানমন্ডি ও লালমাটিয়ার ফ্ল্যাটের গড় দাম দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ২ হাজার ৪০০ টাকা। বর্তমানে ধানমন্ডি এলাকায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে ১৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায়। আর লালমাটিয়ায় দাম ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।

বারিধারায় বর্তমানে প্রতি বর্গফুট ২২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে। ২০০০ সালেও অভিজাত এই এলাকায় এই দাম ছিল ২ হাজার ১৫০ টাকা। আরেক অভিজাত এলাকা বনানীতে ২০০০ সালে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ছিল গড়ে ২ হাজার ২০০ টাকা। এখন এই এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে প্রতি বর্গফুটে ১৫ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হবে। এমন চিত্রই ঢাকা শহরে এলাকাভেদে বিভিন্ন দাম হয়ে থাকে।

ঢাকার বাইরের চিত্রটা কেমন?

অন্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ফ্ল্যাটের দাম ঢাকার মতো না হলেও এলাকাভেদে ভিন্ন। তার একটি পর্যালোচনা পাওয়া গেছে ১২ বছর ধরে বাংলাদেশে প্রোপার্টি কেনাবেচার স্বনামধন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিক্রয় ডটকমে। প্রতিষ্ঠানটির সূত্রমতে, ১ হাজার ৮০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টের গড় দাম খুলনায় প্রতি বর্গফুট চার হাজার এবং চট্টগ্রামে প্রতি বর্গফুট ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে রাজশাহীতে ১ হাজার ৪০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টের গড় মূল্য প্রতি বর্গফুট সাড়ে চার হাজার টাকা। তবে বরিশাল তুলনামূলক সাশ্রয়ী। সেখানে দেড় হাজার বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টের গড় মূল্য প্রতি বর্গফুট এক হাজার টাকা। সিলেটে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টের গড় মূল্য প্রতি বর্গফুট তিন হাজার টাকা। রংপুরে দেড় হাজার বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টের গড় মূল্য প্রতি বর্গফুট পাঁচ হাজার টাকা।

এ তথ্যগুলো বিক্রয় ডটকমের গত এক বছরে পোস্ট করা বিজ্ঞাপনগুলোর ওপর ভিত্তি করে নেওয়া। তবে ফ্ল্যাটের চূড়ান্ত দাম লোকেশন ও প্রাপ্ত সুবিধাদির ওপর ভিত্তি করে কমবেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ডেটা টিম।