গবেষণার তথ্য
মেরুদণ্ডের সমস্যার প্রধান কারণ আঘাত
গাছ থেকে পড়ে বহু মানুষ মেরুদণ্ডে আঘাত পাচ্ছেন। জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার।
গবেষণা বলছে, মেরুদণ্ডের সমস্যার প্রধান কারণ আঘাত। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেরুদণ্ডের রোগীদের ৫৭ শতাংশই কোনো না কোনো আঘাত পাওয়া। সড়ক দুর্ঘটনার চেয়ে পড়ে গিয়ে বেশি মানুষ মেরুদণ্ডে আঘাত পান। দেশে এটি এখন জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিলটন হলে আয়োজিত গবেষণা তথ্য অবহিতকরণ অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বলা হয়, ছোট শিশু খাট থেকে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডে আঘাত পেতে পারে। আবার অশীতিপর বৃদ্ধ মেঝেতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডে আঘাত পেতে পারেন। এটি সব বয়সের মানুষের সমস্যা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ১৮টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভোগা ২ হাজার ৪৬৯ জন রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করে গবেষকেরা দেখেছেন, ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ রোগী কোনো না কোনো সময়ে আঘাত পেয়েছেন। ৪১ দশমিক ১ শতাংশের মেরুদণ্ডের সমস্যার কারণ কোনো না কোনো রোগ। বাকি ১ দশমিক ৯ শতাংশ কডা ইকুইনা সিনড্রোমে (চাপে মেরুরজ্জুর ক্ষতি) ভোগে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের শিক্ষক ও ১৬ সদস্যের গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক মো. তছলিম উদ্দিন বলেন, মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে গবেষণা চলছে। এর অংশ হিসেবে এ গবেষণা করা হয়েছে। দেশে মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের কোনো রেজিস্ট্রি (সমস্যাসহ বিস্তারিত তথ্যসংবলিত নিবন্ধন) নেই। তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি কী কারণে মেরুদণ্ডের রোগে ভুগছেন, তিনি স্বাস্থ্যসেবা পান কি না বা পেলে কতটা পান, তার সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কী আছে—এসব বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেশে নেই। চলমান গবেষণার মাধ্যমে দেশে সেটি শুরু হবে।
গবেষণা ও ফলাফল
গবেষকেরা দেশের ১৮টি হাসপাতালের রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বড় বড় সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল এবং সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) রয়েছে। এ ছাড়া দুটি বেসরকারি হাসপাতালও এ তালিকায় রয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এসব রোগীর তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
সাধারণভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতের কথা বেশি আলোচনায় আসে। গণমাধ্যমেও তা বেশি প্রচার পায়। ফলাফল উপস্থাপনার সময় ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, রোগীদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা বেশি। এ বয়সীরা ৩৫ শতাংশ। ৩১–৪৫ ও ৪৬–৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার যথাক্রমে ২৮ ও ২২ শতাংশ। ১৮ বছরের নিচে এবং ৬১ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে মেরুদণ্ডের সমস্যা ভোগা ব্যক্তির হার যথাক্রমে ৭ ও ৮ শতাংশ।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পড়ে গিয়ে, সড়ক দুর্ঘটনায়, খেলতে গিয়ে, কাজ করতে গিয়ে, মারামারি করে, ভারী জিনিসের আঘাতে, ধারালো অস্ত্রের ব্যবহারে ও ফাঁস দেওয়ার কারণে মানুষ মেরুদণ্ডে আঘাত পান। তবে মানুষ সবচেয়ে বেশি আঘাত পান পড়ে গিয়ে। ৪৫ শতাংশ মানুষের মেরুদণ্ডের সমস্যার কারণ পড়ে যাওয়া। ২৯ শতাংশের সমস্যার কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। এক শতাংশের কম আঘাতের কারণ খেলাধুলা। বাকি প্রায় ২৫ শতাংশ আঘাতের বিভিন্ন ধরনের কারণ রয়েছে। গবেষকেরা বলেন, দেশে মেরুদণ্ডের আঘাতের অন্যতম প্রধান কারণ গাছ থেকে পড়ে যাওয়া, গাছ থেকে লাফ দেওয়া।
অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক বলেন, অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা এবং পরিবারের সবচেয়ে কর্মক্ষম ব্যক্তি এ সমস্যায় বেশি পড়ছেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া একজন রোগীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। এসব রোগীর চিকিৎসায় রাষ্ট্রের ওপর অর্থনৈতিক চাপ পড়ে। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় মানুষকে সচেতন করা।’
করণীয় বিষয়ে বক্তব্য দেন বিএসএমএমইউর সার্জারি অনুষদের ডিন মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, আঘাত পাওয়া ব্যক্তিকে কোলে তুলে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে ক্ষতি বাড়ে। আঘাত পাওয়া ব্যক্তিকে এক ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিলে ভালো হয়। রিকশায় বা মোটরসাইকেলে চড়ার সময় ওড়না সাবধানে রাখা জরুরি।