নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সম্প্রচারিত তুমুল জনপ্রিয় নাটক ছিল আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই। তারও আগে জনপ্রিয় হয়েছে অয়োময়, এইসব দিনরাত্রি। ছিল ‘এসো গান শিখি’, ‘মাটি ও মানুষ’, ‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘মীনা’ কার্টুনের মতো অনুষ্ঠান। নব্বইয়ের দশকে সাড়ে তিন হাজার মানুষের মধ্যে করা এক জরিপে দেখা গেছে, বিটিভির অনুষ্ঠান নিয়ে দর্শকের সন্তুষ্টির হার ৫৪ শতাংশ। বর্তমানে এমন কোনো জরিপ নেই । তবে ২টি কেন্দ্র ও ১৪টি উপকেন্দ্র নিয়ে পরিচালিত বিটিভির বরাদ্দ আছে যথেষ্ট। চলতি বছর প্রতিষ্ঠানের বাজেট ৩২০ কোটি টাকার বেশি।
দর্শক বলছে, বিটিভি ‘সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স’ থেকে ‘বাতাবিলেবুর বাম্পার ফলন’ তকমা পেয়েছে। গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দর্শক টানতে না পারার কারণ, সব সরকারই বিটিভিকে নিজেদের প্রচারযন্ত্র বানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় এই গণমাধ্যমকে নতুন করে সাজানোর লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন নীতিমালা প্রণয়ন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। পরের বছর সেই কমিশন বিটিভিকে স্বায়ত্তশাসনে পরিচালনাসহ অনেকগুলো সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছিল। সেই প্রতিবেদন পরে আর আলোর মুখ দেখেনি। গত ২৭ বছর ধরে অন্ধকারেই রয়ে গেছে।
দলীয় প্রভাবই শেষ কথা
বিটিভির দৈনিক নয়টি খবরের বুলেটিন প্রচারিত হয়। এর মধ্যে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে চারটি বুলেটিন ৩০ মিনিট করে সম্প্রচারিত হয়। বাকিগুলো সংক্ষিপ্ত বুলেটিন। চলতি বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এক সপ্তাহ বেলা দুইটার বুলেটিন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম ১৫ মিনিটের বরাদ্দ শুধু উন্নয়ন প্রচারণায়। সংবাদ বুলেটিনের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশে স্থান পায়নি জনগুরুত্বপূর্ণ খবর। এক যুগ ধরে দেশের সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বাধ্যতামূলকভাবে বিটিভির বেলা দুইটার সংবাদ সম্প্রচার করতে হয়েছে। অবশ্য এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হয়েছে গত ১৮ সেপ্টেম্বর।
বিটিভির সাবেক এক মহাপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিটিভির সংবাদ কখনোই সরকার প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে খবর প্রচার করতে পারেনি। বিটিভির বার্তাকক্ষের একটি বড় অংশের নিয়োগ ছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়। ফলে সব সরকারের আমলেই খবর ও অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভেতরে ও বাইরে দুই দিক থেকেই দলীয় ব্যক্তিদের প্রভাব ছিল।
বিটিভির বার্তাকক্ষ থেকে জানা যায়, এখানে ৪৫ জন প্রতিবেদক ও ৩৭ জন উপস্থাপকসহ সংবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন প্রায় ২০০ জন; কিন্তু চারটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তাকক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একেকটি বেসরকারি চ্যানেলে সংবাদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেন ১২০ থেকে ১৩০ জন।
সারা বছরের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সময়–সংক্রান্ত বিটিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিটিভিতে ‘শিক্ষামূলক’ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে ৯১ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট। ‘ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও পরিবেশ’ বিষয়ক অনুষ্ঠান ৬৭ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট আর উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়েছে ১০২ ঘণ্টার বেশি। পরের বছরের চিত্রও প্রায় একই রকম। উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বিভিন্ন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং উদ্বোধনও রয়েছে।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন নীতিমালা প্রণয়ন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বেতার ও টেলিভিশনের সংবাদ-প্রচার এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান নির্মাণ ও পরিবেশনের ব্যাপারে সুষ্ঠু নীতিমালার অভাব রয়েছে। সংবাদ-প্রচারের ক্ষেত্রে ‘নিউজ ভ্যালু’র পরিবর্তে ‘প্রটোকল ভ্যালু’ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। প্রভাবশালী মহলের পক্ষ থেকে ক্যামেরার জন্য, ছবি প্রদর্শনের জন্য, গুরুত্ব সহকারে তাদের সংবাদ প্রচারের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়, বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে বিটিভির উপমহাপরিচালক হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যাওয়া কামরুন্নেছা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক চাপ সব সময়ই ছিল; কিন্তু অনুষ্ঠানে কোন শিল্পীদের আনা হবে, তা নির্ভর করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর। আমাদের সময়ে অন্তত তেমনই ছিল।’ তিনি বলেন, বিটিভির খবর নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে; কিন্তু আশি বা নব্বইয়ের দশকেও বরেণ্য শিল্পী ফিরোজা বেগম, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনের মতো গুণী শিল্পীরা বিটিভিতে অনুষ্ঠান করেছেন। পরে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে অনেক শিল্পীকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। শাহনাজ রহমতউল্লাহ বা নিয়াজ মোহাম্মদের মতো শিল্পীদের ডাকত না। সেই শিল্পীরাও একপর্যায়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
এ ছাড়া পর্যাপ্ত গবেষণা না করে অনুষ্ঠান নির্মাণ এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিল্পী নির্বাচন ও তাদের দিয়ে অনুষ্ঠান তৈরির অভিযোগ গত ১৫ বছরে আরও বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে শিল্পী সম্মানীর অর্থ গায়েব, টাকার বিনিময়ে তালিকাভুক্তকরণসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে চলতি বছরেই প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
আয় কম, ব্যয় বেশি
বিটিভির সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০২৪–২৫) বিটিভির বাজেট ৩২০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের বছরের চেয়ে বরাদ্দ বেড়েছে ৯ কোটি টাকা। ২টি পূর্ণাঙ্গ ও ১৪টি উপকেন্দ্রের মধ্যে রাজধানীর রামপুরায় অবস্থিত বিটিভির ঢাকা কেন্দ্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বরাদ্দও বেশি। গত অর্থবছরে এই কেন্দ্রের ব্যয় ছিল ১৩৬ কোটি টাকা। আয় হয়েছে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা।
গত অর্থবছরের সব কটি কেন্দ্রের মোট আয় ও ব্যয় কত ছিল, সেটা জানা যায়নি। এ বিষয়ে একাধিকবার আশ্বাস দিয়েও বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার নূরুল আজম শেষ পর্যন্ত কোনো তথ্য দেননি।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম হিসেবে বিটিভি বিনা মূল্যে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা সম্প্রচার করার সুযোগ পায়; কিন্তু ২০২২ সালের ৯৮ কোটি টাকা দিয়ে বিটিভি বিশ্বকাপ সম্প্রচারের প্রচারস্বত্ব কেনে তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এর আগে–পরে টাকা দিয়ে বিশ্বকাপ প্রচারের স্বত্ব আর কেনা হয়নি। কেবল তমা কনস্ট্রাকশনকে ব্যবসায়িক সুবিধা দিতেই এটা করা হয়। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ওই প্রচার স্বত্ব কেনার সময় বিটিভির মহাপরিচালক ছিলেন সোহরাব হোসেন। তিনি সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বিটিভির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বিনা মূল্যে খেলা সম্প্রচারের কথা; কিন্তু তখন একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে) প্রচার স্বত্ব কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাস হয়, যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেছিলেন।
২০১৬-২১ পর্যন্ত বিটিভির মহাপরিচালক ছিলেন হারুন অর রশিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৬৪ সাল থেকে বিটিভি চলছে। কোনো দিন টাকা দিয়ে খেলা কিনতে হয়নি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিনা মূল্যে স্বত্ব নিয়ে খেলা সম্প্রচার করে বিটিভি যথাক্রমে সাড়ে চার কোটি ও পৌনে আট কোটি টাকা আয় করে। অথচ ২০২২ সালে ৯৮ কোটি টাকা দিয়ে খেলা কিনে বিটিভি আয় করে সাড়ে তিন কোটি টাকা। এর মধ্যে আড়াই কোটি টাকা আবার সরকারি বিজ্ঞাপন।
এখনো আছে দর্শকের মায়া
কত দর্শক বিটিভি দেখেন তা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের জরিপ নেই তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কান্তার গ্রুপ লিমিটেডের জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালে দেশের ১ কোটি ১৩ লাখ মানুষ টেলিভিশন খুললে কখনো না কখনো বিটিভি দেখতেন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৮০ লাখে।
বিটিভি দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হয় ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের দর্শক ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ৭৪ বছর বয়সী জালোওয়াশান আখতার খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিটিভি হচ্ছে সরকারের গীতের বাক্স। এখন আর দেখি না। চরিত্র বদলে জনপ্রিয় হতে চাইলে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রচারে মনোযোগ দিতে হবে। সব ধরনের মতামতের প্রতিফলন থাকতে হবে টেলিভিশনের পর্দায়।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আনোয়ার হোসেন (৪৫) বলেন, আশির দশকে বিটিভিতে দেখাত প্রেসিডেন্ট এরশাদ কীভাবে পানিতে নেমে ত্রাণ বিতরণ করছেন। তখন বিটিভিকে ‘সাহেব–বিবি–গোলামের বাক্স’ বলা হতো। এরপর হয়েছে বেগম জিয়া টিভি। পরে আওয়ামী টিভি থেকে হয়েছে ‘বাতাবিলেবুর বাম্পার ফলন’। তার পরও বিটিভির প্রতি মানুষের একধরনের মায়া আছে। এটা কর্তৃপক্ষের বোঝা উচিত।
তবে আর্থিক প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে যুক্ত ত্রিশোর্ধ ইসতিয়াক আহমেদ জানান, তিনি ২০০৬ সালের পর আর বিটিভি দেখেননি। তাঁর ভাষ্য, ‘মাঝে অনেক দিন ধরে মনে হতো কেন দেখব? এখন আবার একটু একটু হয়তো পরিবর্তন হচ্ছে। বিটিভির নিজের কনটেন্ট বাড়াতে হবে।’
কমিশনের সুপারিশ
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এইচ এম এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসানের পর তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে একমত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠান দুটিকে সৃজনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ করতে স্বায়ত্তশাসনের নীতিমালাসংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কমিশন গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তৎকালীন সচিব মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহর নেতৃত্বে এই কমিশন ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন একটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
ওই কমিশন তাদের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক ও জনবান্ধব করতে স্বায়ত্তশাসনের অধীন আনার সুপারিশ করেছিল। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশনের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও এর যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিতকরণের বিষয়টিও সুপারিশমালায় উল্লেখ ছিল। এ ছাড়া বেতার ও বিটিভির কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য মান সমন্বয় কমিটি গঠন এবং তার ক্ষমতা ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করাসহ অনেকগুলো সুপারিশ ছিল।
ওই কমিশন যখন প্রতিবেদন জমা দেয়, তখন বিটিভির মহাপরিচালক ছিলেন নাট্য নির্মাতা নওয়াজীশ আলী খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন অনুষ্ঠানের নামে বিটিভিতে যা দেখানো হয়, তা সস্তা বিনোদন। সময়ের পরিবর্তনটা ধরতে পারেনি বিটিভি। স্বজনপ্রীতি না করে দক্ষ জনবল, নিবেদিত শিল্পীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে ভালো অনুষ্ঠান হবে না। তিনি আরও বলেন, বিটিভি চালাতে বাজেট প্রয়োজন আছে; কিন্তু শুধু বাজেট দিয়ে ভালো নাটক বা অনুষ্ঠান হয় না। নির্মাণশৈলী থেকে শুরু করে পাণ্ডুলিপির মান, শিল্পীর দক্ষতা, পরিচালকের রুচি সবকিছুরই মানোত্তীর্ণ হতে হবে।
বিটিভির সাবেক উপমহাপরিচালক কামরুন্নেছা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসাফ্উদ্দৌলাহ্ কমিশন বিবিসির আদলে বিটিভিকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছিল। কোনো সরকার সেই সুপারিশ আমলে নেয়নি।’
ওই কমিশন ২০০৯ সালে একবার আলোচনায় এসেছিল। তখন এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জানতে চেয়েছিল, ওই কমিশন কী কী কাজ করেছে। পরে অবশ্য এ নিয়ে আর কোনো আলোচনা শোনা যায়নি।
গত ৩ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদকদের বৈঠক হয়। বৈঠকে বিটিভি, বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব আসে। এরপর ২৭ বছর আগের সেই কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন এ সুপারিশমালা আবার আলোচনায় আসে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশের মিডিয়া ও চলচ্চিত্রবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফাহমিদুল হকের মতে, বিটিভিকে সফল করতে স্বায়ত্তশাসন একটি মাধ্যম হতে পারে। তবে কেবল কাগজে–কলমে এই ব্যবস্থা হলে হবে না। এর ব্যবহারিক দিক ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন গ্রামের মানুষও মুঠোফোনে ইউটিউব দেখেন। বিটিভির পুরোনো গৌরব ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন। তবে যেহেতু এর বাজেট এবং অন্যান্য সক্ষমতা আছে, সেটিকে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য মিডিয়া কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।’