বিমানের ৩০ শতাংশের বেশি ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ে
আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বিলম্বের হার বেশি। কোনো কোনো মাসে আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৩০ শতাংশের বেশি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক দেরিতে ছাড়ে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ফ্লাইট বেশি দেরি করে ছাড়ে।
গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরের ফ্লাইটের তথ্য নিয়ে বিমানের তৈরি করা এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, এই এক বছরের কোনো কোনো মাসে আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটা বিমান সংস্থা কতটা সময় মেনে চলে, তা বোঝা যায় সংশ্লিষ্ট সংস্থার অন টাইম পারফরম্যান্স বা ওটিপি থেকে। আন্তর্জাতিকভাবে সাধারণত কোনো ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিটের মধ্যে উড়াল দিলে তা নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে বলে ধরা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক বছরের ওটিপি পরিস্থিতি নিয়ে সংস্থাটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এই এক বছরে বিমানের বহির্গমন (ডিপারচার) ওটিপির গড় হলো ৬৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর অবতরণের (অ্যারাইভাল) ওটিপির গড় ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ বিমানের ৩০ শতাংশের বেশি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের পরে উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।
এ বিষয়ে বিমানের মুখপাত্র, মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়ার কারণ, হজ ফ্লাইটের মতো অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, উড়োজাহাজের স্বল্পতা—এ ধরনের কিছু কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। তিনি বলেন, এখন বিমানের উড়োজাহাজ আছে ২১টি। এই সংখ্যা আরও বেশি হলে ভালো হতো। তবে ওটিপি বাড়ানোর বিষয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।
বিমানের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের চেয়ে ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাওয়ার ফ্লাইটগুলো ছাড়তে দেরি হওয়ার হার বেশি। গত এক বছরের মাসভিত্তিক হিসাবে কেবল চলতি বছরের মার্চে বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সময়মতো উড্ডয়ন বা ওটিপির হার ৭০ শতাংশের ওপরে ছিল। গত জানুয়ারিতে এই হার ছিল ৩৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তার আগের মাস ডিসেম্বরে ছিল ৪৭ দশমিক ২৫। এ ছাড়া বাকি মাসগুলোতে ওটিপির হার ছিল ৫৯ থেকে ৬৭ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোর বিলম্ব অপেক্ষাকৃত কম। গত এক বছরের মধ্যে এক মাস ছাড়া বাকি ১১ মাসে তাদের ওটিপি ছিল ৭২ থেকে ৮৭ শতাংশ।
ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্বের কিছু কারণ প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বিমান। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্বিত হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত চেক ইন কাউন্টার না থাকা, বোর্ডিং গেট দিতে দেরি হওয়া, একই বোর্ডিং গেটে একাধিক ফ্লাইট দেওয়ার কারণেও বিমানের ফ্লাইট ওটিপি মেনে চলা সম্ভব হয় না। বহির্গমন ব্যাগেজ এলাকায় স্থানস্বল্পতার কারণে ব্যাগেজ কনটেইনার আনা–নেওয়ায় সমস্যা হয়, এতেও দেরি হয়। এ ছাড়া কারিগরি কারণে (১৪ দশমিক ১০ শতাংশ), বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কারণে (৭ দশমিক ৮০ শতাংশ), আবহাওয়ার কারণে (৭ দশমিক ৮০ শতাংশ) এবং কেবিন পরিষ্কার করতে দেরি হওয়া, ক্রু আসতে দেরি হওয়াসহ নানা কারণে ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংসদীয় কমিটিকে বিমান জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ছাড়তে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক কাউন্টার ফ্লাইট ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে এবং অভ্যন্তরীণ কাউন্টার আধা ঘণ্টা আগে বন্ধ করা হচ্ছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং বিভিন্ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপকদের সমন্বয়ে পরিদর্শন দল গঠন করা হয়েছে।
বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ২০ শতাংশ ফ্লাইট বিলম্ব হওয়াকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়; কিন্তু বিমানের ক্ষেত্রে সেটা বেশি। বিমানের কিছু উড়োজাহাজ পুরোনো হওয়া, রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী কম থাকাসহ নানা কারণে এটি হতে পারে। এ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বিমানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নাহলে বিমান নিয়ে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব আরও বাড়বে।