জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ-গাম্বিয়া
বিশ্বের সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া যৌথভাবে কাজ করবে। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং গাম্বিয়ার সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু তাংগারা এ বিষয়ে একটি যৌথ সম্মত ঘোষণায় সই করেন।
রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন আমরা যে চুক্তিটি (সম্মত) সই করলাম, সেটি হচ্ছে শান্তিরক্ষী বাহিনীর কো-ডিপ্লয়মেন্ট–সংক্রান্ত। এখন তো আমরা শান্তিরক্ষী মিশনে একা একাই লোক পাঠাই। ভবিষ্যতে আমাদের যত শান্তিরক্ষী বাহিনী যাবে, সেগুলোর অনেকগুলোতে বুঝেশুনে তাদের (গাম্বিয়া) থেকে শান্তিরক্ষী নেব।’
প্রসঙ্গত, বর্তমানে নয়টি শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করছে বাংলাদেশ। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি শন্তিরক্ষী জাতিসংঘে কাজ করেছে।
গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে গাম্বিয়া, বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা হবে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চসংখ্যক শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ মিশনে পাঠানো হয়। গাম্বিয়াও শান্তিরক্ষী মিশনে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এর আগে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে দুই দেশের প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে যৌথভাবে কাজ করার প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে দুই দেশের সৈন্য মোতায়েনে গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যাডামা বারোর প্রস্তাব–সংক্রান্ত একটি অনুরোধপত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন মামাদু তাংগারা। পরে ওই প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী নীতিগতভাবে সম্মতি দেন। জাতিসংঘের অনুমোদন সাপেক্ষে শান্তিরক্ষী মিশনে সৈন্য মোতায়েনের প্রস্তাব বাস্তবায়নে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে
সফররত গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু তাংগারা বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত সবাইকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। রোহিঙ্গারা নিজের দেশে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরবেন। রোববার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজ বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার গণহত্যার মামলার প্রসঙ্গ টেনে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার এবং মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিজভূমে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ওআইসি, জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছে।
মামাদু তাংগারা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা শুধু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই কাজ করবে না, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার নীতিগত প্রতিবাদ হিসেবেও ভূমিকা রাখবে।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করার ক্ষেত্রে চাপের বিষয়ে জানতে চাইলে মামাদু তাংগারা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গাম্বিয়ার মামলা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। কেননা এটি আমাদের দেশের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মানবাধিকার এবং শান্তি রক্ষায় গাম্বিয়া কার্যকর ভূমিকা রাখতে চায়।’