সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পালানোর তথ্য পেলে আটক করা হতো: বিজিবি মহাপরিচালক
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কোন জায়গা দিয়ে ভারতে গেলেন, সেই তথ্য পেলে অবশ্যই তাঁকে আটক করতেন বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। তিনি আরও বলেন, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দুর্নীতিপরায়ণরা যাতে সীমান্ত পাড়ি দিতে না পারেন, সে ব্যাপারে বিজিবির সব বিওপিতে নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ভারতের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফেরত আনা যাবে। তাঁকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা জরুরি বলে তিনি মনে করছেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ভারতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বলে একটি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। তিনি কীভাবে, কোন সীমান্ত দিয়ে গেলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে বিজিবি সদর দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, কারা কারা সীমান্ত দিয়ে পালাতে পারেন—এ বিষয়ে একটি তালিকা করে সীমান্তে বিজিবির সব বিওপিতে বিতরণ করা হয়েছে। গত ৭ আগস্ট থেকে পালাতে গিয়ে বিজিবির হাতে ২২ জন আটক হয়েছেন। পরে তাঁদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাঁদের মধ্যে সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ উচ্চপদস্থ চারজন কর্মী রয়েছেন। তাঁরা এখন বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে আছেন। বাকি ১৮ জন মধ্য ও নিম্নপদস্থ। তাঁরাও অপরাধ করেছেন।
সীমান্ত প্রসঙ্গে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত ৪ হাজার ২০০ কিলোমিটার, যেটি বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম সীমান্ত। সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি গার্ড দেওয়া ও সার্ভিল্যান্স করা বিজিবির পক্ষে সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, অনেকে দালালদের টাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। বিজিবির সদস্যরা কাউকে পালাতে সহায়তা করছেন, এমন তথ্য পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সীমান্ত দিয়ে পালানো রোধে বিজিবি বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘৬ আগস্ট থেকে যে স্ক্রল দেখেছেন যে সীমান্ত পথে পালানো রোধে বিজিবিকে সহায়তা করুন। এই কাজ, নির্দেশনা কেউ বিজিবিকে দেয়নি। নিজ উদ্যোগে করেছি। তখন থেকে আমরা চেষ্টা করছি। তথ্য দেওয়ার যেসব সংস্থা আছে, তারাও যদি তথ্য দেয়, তাহলে কাজটা সহজ হয়।’ সাংবাদিকদেরও কোনো তথ্য থাকলে তা দিয়ে সহায়তা করতে আহ্বান জানান তিনি।
বিজিবিপ্রধান বলেন, ‘সবাই কি পালিয়ে গেছেন? আমার মনে হয় না। জনবহুল এই দেশে কেউ কেউ আত্মগোপনে আছেন। মাদক ব্যবসায়ী বদিকে ধরার জন্য বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। শোনা গেল তিনি ট্রলারে মিয়ানমার গেছেন। কিন্তু গ্রেপ্তার হলেন সীতাকুণ্ড থেকে। এ রকম একদিকে যাওয়ার আওয়াজ দিয়ে অন্যদিক থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন অনেকে।’
সীমান্ত রক্ষার প্রশ্নে বিএসএফকে (ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী) কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত রক্ষার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। বিএসএফকে আমরা কোনো ধরনের ছাড়—যেটা নিয়মনীতির বাইরে, আমরা দেব না, এটুকু আশ্বাস দিতে চাই।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর সীমান্তে ভারতের মনোভাবে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘যেসব মাইনরটি আছে, তারা চলে যেতে পারেন, প্রথম থেকে এ ধরনের একটি অপপ্রচার ছিল। তখন আমরা দেখতে পেয়েছি, বিএসএফ তাদের ক্যাম্পগুলোতে জনবল বাড়িয়েছে, তারা অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী আসার কথা নয়, দূরে থাকার কথা, সেসব জায়গায় সেনাবাহিনীর মুভমেন্ট আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ওই সময়গুলোতে।’ এসব বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের জানিয়েছে, এ তথ্য সঠিক নয়। তবে পরবর্তী সময়ে ডিজি পর্যায়ে যে মিটিং হবে, বিষয়টি আবারও তোলা হবে।’
দেশের কিছু অপরাধী চক্র বিএসএফের কাছে তথ্য পাচার করছে বলে অভিযোগ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। তিনি বলেন, এই অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করার কাজ চলছে।
মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান বলেন, সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের ভেতরে ৮ কিলোমিটার এলাকা বিজিবির আওতাভুক্ত। এবার এসব এলাকায় ২ হাজার পূজামণ্ডপ হচ্ছে। সেখানে বিজিবি সদস্যদের মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। যেসব পূজামণ্ডপ বিওপি এলাকা থেকে দূরে, সেখানে বিজিবির বেজ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপদ পরিবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পূজা উদ্যাপন করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।