'আফা, গাড়ি কহন আইবো?'
‘ভাইরে আমার জন্যে থাকিস। আল্লাহ—ভাইয়ের সুরতটা এব্বার দেখাইস আল্লাহ।’
রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের পেছনে এক কোনায় ক্রমশ বিলাপ আর কান্নার আওয়াজ। কাছে গিয়ে দেখা গেল, কাঁদতে কাঁদতে প্রায় অবসন্ন এক নারী। কথা বলতে পারছেন না। ছয় বছরের ছেলে রাসেল নীরবে তাকিয়ে রয়েছে মায়ের দিকে।
পাশে বসা বৃদ্ধ জুবায়ের আলম জানালেন, মৃত ভাইকে একনজর দেখার জন্য যাচ্ছে এই নারীর পরিবার। নারীর নাম নাসিমা।
জানা গেল, ১৮-দলীয় জোটের অবরোধে গত ২৫ নভেম্বর খুলনার ফুলবাড়ীতে ককটেলের আঘাতে আহত হন ট্রাকচালক জলিল। তাঁর ট্রাকও ভাঙচুর করা হয়। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে জলিল মারা গেছেন গত মঙ্গলবার সকালে। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন বোন নাসিমা।
নাসিমা বলেন, ‘খবর পাইয়া কাইলকা (মঙ্গলবার) বেলা একটায় চট্টগ্রাম স্টেশনে আইছিলাম। তয় দুফুরের টেরেন ছাড়ছে রাইতে। এইহানে (কমলাপুর) পৌঁছছি সকাল ১০টায়। ভাবছিলাম দুফুরের টেরেনে উঠুম। সুন্দরবনের টিকিটও কাটছি। কিন্তু টেরেনের খবর নাই। আল্লাহ—ভাইরে কি আর একবার দেখুম না। আফা গাড়ি কহন আইবো?’
জুবায়ের আলমও অসুস্থ মেয়েকে দেখতে খুলনা যাচ্ছেন।
সকাল থেকে অপেক্ষা করে বেলা আড়াইটায় চট্টগ্রামগামী টিকিটের টাকা ফেরত নিলেন বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রাইসুল আসাদ। মা রাফিয়া খাতুন প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে লালদীঘিতে বোনের বাসায় রয়েছেন। কিন্তু যেতে পারছেন না আসাদ। তিনি বুধবার রাতে ঝুঁকি নিয়ে হলেও সড়কপথে যাওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান। কারণ, রাতের তূর্ণা নিশীথা ছাড়বে কি না, রেল কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
গতকাল মুগদা থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত বেশির ভাগ বাস কাউন্টার তালা মারা দেখা যায়। সায়েদাবাদ টার্মিনালে জড়ো করে করে রাখা বাস পাহারা দেওয়ার জন্য কয়েকজন সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়া কেউ নেই।
টার্মিনালে কিশোরগঞ্জগামী হাওরবিলাস বাস কাউন্টারের উল্টো দিকের রাস্তায় বসে রয়েছেন খাদেমুল্লাহ। তিনি পেশায় বাসচালকের সহকারী। কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে যখন যে বাসে সুযোগ মেলে, তাতে কাজ করেন খাদেম। প্রতি ট্রিপে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পান। কিন্তু গত দুই মাসে বিভিন্ন সময়ে হরতাল ও অবরোধে প্রায় কর্মহীন তিনি।