সিলেটের তারাপুর চা-বাগানে রাগীব আলীর দখল করা মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৭১৫টি স্থাপনা সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।
উচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাগানের বসতি এলাকা ঘুরে সেবায়েতকে স্থাপনাগুলো বুঝিয়ে দেন সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো. মাহবুবুর রহমান। এ সময় মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেনসহ এলাকাবাসীও উপস্থিত ছিলেন। পর্যায়ক্রমে এসব স্থাপনা অবৈধ দখলদারমুক্ত করতে প্রশাসনিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সিলেট নগরের পাঠানটুলার উপকণ্ঠে ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গার তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন শিল্পপতি রাগীব আলী। পরে ১৯৯৫ সালে রাগীব আলী ও তাঁর স্ত্রীর নামে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া ৩৩৭টি আবাসিক প্লট তৈরি করে বিক্রি করে দেন রাগীব আলী। এসব প্লটে গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসন ও বিপণিবিতান। গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায়ে চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৫ মে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তারাপুর চা-বাগানের মালিকানার ৩২৩ একর চা-ভূমি সেবায়েতকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭১৫টি স্থাপনা বুঝিয়ে দেওয়া হলো।
সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়ার সময় মীর মো. মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তারাপুর চা-বাগানের অবৈধ স্থাপনাগুলোর মধ্যে ৭১৫টি স্থাপনা সেবায়েতকে অফিশিয়ালি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং কিছু স্থাপনা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট থাকায় সেগুলো পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের পর বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলমান। অবৈধ স্থাপনায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের ইতিপূর্বে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। যখন উচ্ছেদে যাব, তখন সেটা করা হবে।’
৭১৫ জনের দখলে থাকা স্থাপনা বুঝিয়ে দেওয়া হলেও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম বাকি রয়েছে জানিয়ে সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘দখলে থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলো প্রশাসন বুঝিয়ে দিয়েছে। আশা করি, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদেও প্রশাসন সহায়তা করবে।’
প্রসঙ্গত, তারাপুর চা-বাগান জালিয়াতি করে দখল ও দেবোত্তর সম্পত্তির হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সিলেটের মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে গত ১০ আগস্ট রাগীব আলী ভারতে পালিয়ে যান।