৪৩ বছর পর চিকিৎসা পেলেন শহীদজায়া
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জোসনা বেগম চৌধুরী (৬২) মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত হয়েছিলেন। তাঁর ডান পায়ে জখম হলেও কোনো চিকিৎসা হয়নি। দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে সেই নির্যাতনের কষ্ট ও স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি।
নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার আদায়ে কর্মরত ‘চেতনা ’৭১ হবিগঞ্জ’ নামের একটি সংগঠন জোসনা বেগমের সন্ধান পেয়ে গত সোমবার তাঁকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সংগঠনটির তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচ নম্বর কেবিনে জোসনা বেগম ভর্তি রয়েছেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর ডান পা জখম হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ে চিকিৎসা না হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করতে হবে। এ ছাড়া বয়সের কারণে শরীরে তাঁর আরও কিছু রোগ রয়েছে। পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখে চিকিৎসা অব্যাহত রাখা হবে।
জোসনা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ (নম্বর ৪১৮১৯) মো. ছওয়াব আলী খানের স্ত্রী। ছওয়াব মুক্তিযুদ্ধের সময় মৌলভীবাজারের জুড়ীর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। স্ত্রী ও ছয় মাস বয়সী এক সন্তানকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন ছওয়াব আলী। এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জোসনাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে। মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে স্বামী শহীদ হওয়ায় পর কোলের শিশুকে নিয়ে একা হয়ে পড়েন জোসনা। পরে তিনি সন্তানকে নিয়ে জুড়ী থেকে স্থায়ীভাবে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সেই থেকে সেখানেই জোসনা বাস করে আসছেন।
জোসনা বলেন, ‘জীবনে কোনো দিন চিকিৎসা পাইছি না, সুযোগও নিছি না। অখনে ওই মা (কেয়া চৌধুরী) আমারে বাইর কইরা আনছইন। সম্মান দিয়া ইনও ভর্তি করছইন। আমি সম্মানিত অইছি।’
চেতনা ’৭১ হবিগঞ্জের সম্পাদক কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর চারজন নারী মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে কাজ শেষ করার পর জোসনার খবর পাই। তাঁর সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গত রোববার ফেঞ্চুগঞ্জে গিয়ে তাঁর সাক্ষাৎ হয়।’ জোসনার চিকিৎসা শেষে একজন শহীদ জায়া ও নির্যাতিত নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য তাঁকে নিয়ে চেতনা ’৭১ হবিগঞ্জ দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু করবে।