বিশ্ব শৌচাগার দিবস কাল
২ কোটি ৩৪ লাখ মানুষের অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার
উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করে ৮৪.৫% মানুষ
অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করে ১৩.৯%
উন্মুক্ত স্থানে মল ত্যাগ করে ১.৫%
ভাগাভাগি করে শৌচাগার ব্যবহার করে ২৪.৪%
হাত ধোয়ার অভ্যাস আছে ৭৪.৮% মানুষের
তথ্য: মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে, ২০১৯
দেশের ২ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ এখনো অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করছে। জনসংখ্যার বড় অংশ উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করলেও তা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মানদণ্ডে অনেকটাই পিছিয়ে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খোলা জায়গায় মলত্যাগের হার কমিয়ে আনলেও স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত শৌচাগার ব্যবহারে সন্তোষজনক সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা মহামারি এবং এর পরবর্তী সময়ে পানি ও সাবান সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে। শুধু করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি রোধে নয়; জ্বর, ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব রোধেও উন্নত শৌচাগার ব্যবহার, হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আগামীকাল ১৯ নভেম্বর বিশ্ব শৌচাগার দিবস। স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে বিশ্ব শৌচাগার দিবস পালন শুরু হয়। ২০০১ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে এলেও ২০১৩ সালে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে এর স্বীকৃতি দেয়। দিনটির উদ্দেশ্য স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য শৌচাগারের সুবিধা নিশ্চিত করা।
বহুমাত্রিক সূচক নির্ধারণে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ গুচ্ছ জরিপ বা মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিকস) পরিচালনা করে। মিকসের ২০১৯ সালের ফলাফলে বলা হয়েছে, দেশের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করে। আর ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করছে। দেশের ১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ এখনো উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বার্ষিক বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রতিবেদন ২০১৯ অনুয়ায়ী, দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮১ লাখ। সে হিসেবে বর্তমানে দেশের ২ কোটি ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করছে। আর উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করছে ১৪ কোটি ২২ লাখ ১২ হাজার মানুষ।
তবে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মানদণ্ডে মৌলিক পয়োনিষ্কাশন বা স্যানিটেশন সেবার সংজ্ঞা ভিন্ন। সেখানে বলা আছে, শুধু উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করলেই হবে না, শৌচাগার এককভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং পয়োবর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।
মিকসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষকে এখনো ভাগাভাগি করে শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। যারা উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করে, তাদের মধ্যেও ২০ শতাংশ মানুষ ভাগাভাগি করে শৌচাগার ব্যবহার করে। দেশে পয়োনিষ্কাশন–সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যও অনেক। ধনীদের তুলনায় দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের অনুন্নত স্যানিটেশন ব্যবহারের হার ৯ গুণ বেশি। ভৌগোলিক অবস্থান ও লৈঙ্গিক ভিত্তিতেও ব্যবধান রয়েছে।
রাজধানীতে অপ্রতুল গণশৌচাগার
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড ১২৯টি। বসবাস করে প্রায় দুই কোটি মানুষ। অথচ শহরজুড়ে গণশৌচাগারের সংখ্যা মাত্র ৬৭টি। নগরবাসী বলছে, ঘরের বাইরে গেলে গণশৌচাগারের সংকটের কারণে নানা সমস্যা পোহাতে হয়। পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ‘নতুন পাবলিক টয়লেট ও বিদ্যমান পাবলিক টয়লেট উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের আওতায় মোট ৪৪টি আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ ও ১৭টি পুরোনো গণশৌচাগার সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে ৩২টি নতুন বাস্তবায়ন ও ১০টি সংস্কার করা হয়েছে। চলছে দুটির কাজ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) শৌচাগার আছে ২৩টি। ৭টি শৌচাগার নির্মাণের কাজ চলমান। একটি প্রকল্পের আওতায় উত্তর সিটিতে ৫৩টি গণশৌচাগার তৈরি করা হবে। ডিএনসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ বলেন, জনসংখ্যা ও আয়তন বিবেচনায় নিলে আরও গণশৌচাগার দরকার। কিন্তু জায়গা–সংকটের কারণে তৈরি করা যাচ্ছে না। এরপরও পার্কসহ যেখানে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে, গণশৌচাগার তৈরি করা হচ্ছে।
দেশের সাড়ে ৮৪ শতাংশ মানুষ উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করলেও তা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মানদণ্ডে অনেকটাই পিছিয়ে।
দরিদ্ররা বেশি পিছিয়ে
শহরের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ বস্তিতে বসবাস করে। ভাগাভাগি করে শৌচাগার ব্যবহার করা ছাড়া তাদের উপায় থাকে না। মিকসের তথ্য অনুযায়ী, শহরের বাসিন্দাদের ২২ শতাংশের বেশি মানুষ ভাগাভাগি করে শৌচাগার ব্যবহার করছে।
ওয়াটার এইডের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখন শুধু শৌচাগার ব্যবহার করলেই হবে না, পয়োবর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করতে হবে। পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা আধুনিক ও জোরদার করতে হবে।
করোনায় গুরুত্ব আরও বেড়েছে
করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি রোধে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রধান সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের মানুষের হাত ধোয়ার অভ্যাস আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু মিকস জরিপ অনুযায়ী, এখনো দেশের এক-চতুর্থাংশের বেশি মানুষের সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশের স্যানিটেশন নিয়ে ওয়াটার এইডের একটি প্রকাশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্যানিটেশন খাতে বিদ্যমান অসমতা করোনা মহামারির পরে আরও বাড়তে পারে। করোনা মহামারি এবং এর পরবর্তী সময়ে পানি ও সাবান সবার জন্য সহজলভ্য ও এর অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, এর জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।