অর্থ আত্মসাৎ
২৩৮ কোটি টাকা ‘আত্মসাতের’ তদন্ত এখনো শেষ হয়নি
এসবি এক্সিম গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহজাহান বাবলু ও চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা পাচারের মামলা হয়েছিল ২০১৯ সালে।
টেরাকোটা টাইলস রপ্তানির নামে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে এসবি এক্সিম গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহজাহান বাবলুর বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত আড়াই বছরেও শেষ হয়নি। শাহজাহান বাবলু এখন দেশে রয়েছেন। তবে তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া শাহজাহান বিদেশ যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।
শাহজাহান বাবলু ও এসবি এক্সিম গ্রুপের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ২৩৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ২ কোটি ১০ লাখ টাকা বিদেশে পাচারের মামলা হয়েছিল ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। এরপর ২ বছর ৫ মাসের বেশি সময় পার হয়েছে।
মামলাটি করেছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তও করছে তারা। সিআইডি সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি তদন্তের সময়সীমা দুই মাস বাড়ানোর আবেদন করে আদালতে। আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তে বিলম্বের কারণ হিসেবে সিআইডি আদালতকে জানিয়েছিল, মামলার তদন্তের স্বার্থে দেশ ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন দপ্তর থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে সেই ছয় মাসও পেরিয়ে গেছে, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) নাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নানাবিধ কারণে তদন্তকাজও শেষ হয়নি। তবে এখন মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগির আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
সিআইডি করা ওই মামলায় আসামি পাঁচজন। তবে এর বাইরে অজ্ঞাত কয়েক জন এ ঘটনায় জড়িত বলে সিআইডি এজাহারে উল্লেখ করেছিল। শাহজাহান বাবলু ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন এসবি এক্সিম গ্রুপের ব্যবস্থাপক ইউসুফ হোসেন ওরফে রুবেল, কর্মকর্তা ইমরান মীর, রফিক উদ্দিন ওরফে স্বপন এবং কার্গো ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সৈয়দ অহিদুর রহমান। তাঁরা সবাই জামিনে রয়েছেন।
শাহজাহানের স্ত্রী সুরাইয়া শাহজাহানও গত ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের হজরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন। তিনি বিদেশে যাচ্ছিলেন।
এ মামলার পর এসবি এক্সিম গ্রুপের প্রধান শাহজাহান বাবলু সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলে গিয়েছিলেন। আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশে ফিরে গত বছরের ১৫ নভেম্বর উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন শাহজাহান বাবলু। আদালত তাঁকে জামিন না দিয়ে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এরপর তিনি ঢাকা বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
শাহজাহানের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁর মক্কেল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁর আবেদনটি বিচারাধীন। তিনি আরও বলেন, আড়াই বছর হতে চললেও সিআইডি তদন্ত শেষ করতে পারেনি। আর আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। এই আইনজীবী আরও জানান, শাহজাহান বাবলু এখন দেশেই আছেন।
অবশ্য সিআইডি আদালতকে জানিয়েছে, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত শাহজাহান বাবলু ও তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা জমি ও মালামালসহ ফ্ল্যাট ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট। একই সঙ্গে আদালত ওই সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করার নির্দেশ দেন। এই আদেশ পালন করা হয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা কেউ গ্রেপ্তার হননি
২০১৯ সালে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বিশেষ পরিদর্শনে উঠে আসে, আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে মাটির তৈরি টেরাকোটা টাইলস রপ্তানি করেছে এসবি এক্সিম নামের ঝিনাইদহের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেই রপ্তানির বিপরীতে পাচার করা টাকা এখনো দেশে আসেনি। অথচ ওই রপ্তানি বিল কিনে প্রতিষ্ঠানটিকে ১৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। এখন সেই টাকা ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংক।
দেশ থেকে রপ্তানি করে ও বিদেশ থেকে রপ্তানি আদেশ দিয়ে লোপাট করা অর্থের সুবিধাভোগী গ্রাহক এই শাহজাহান বাবলু।
মামলার এজাহারে সিআইডি বলেছিল, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহায়তায় এসবি এক্সিম গ্রুপ টাইলস রপ্তানির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ২৩৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।
এ প্রসঙ্গে আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি বলেছে, শাহজাহান বাবলুর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইমরান মীর ও ইউসুফ হোসেন টাকা তুলে পাচার করতে সহায়তা করেন। ইমরান মীর বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ৫৬ কোটি টাকা তোলেন। আর ইউসুফ তোলেন ২১ কোটি টাকা। মামলার এজাহারনামীয় আরেক আসামি শাহজাহানের ব্যবসায়িক সহযোগী রফিক উদ্দিন স্বপন অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেন। আর আসামি সৈয়দ অহিদুর রহমান জাল কাগজপত্র তৈরিতে সহায়তা করেন।
ব্যাংকের যাঁরা এই কাজে সহায়তা করেছেন, তাঁদেরও আইনের আওতায় বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।