২০১৯ সালের মধ্যে উখিয়ার সম্পূর্ণ বন উজাড় হয়ে যাবে
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে রান্নার জ্বালানি হিসেবে প্রতিদিন ২ হাজার ২৫০ টন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর এসব কাঠ সংগ্রহ করা হচ্ছে কক্সবাজারের বিভিন্ন বনভূমি থেকে। এভাবে চললে ২০১৯ সালের মধ্যে জেলাটির উখিয়া উপজেলার সম্পূর্ণ বন উজাড় হয়ে যাবে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট ও কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরামের (সিসিএনএফ) এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে সুশীল সমাজ ও বিশেষজ্ঞরা কক্সবাজারের ধ্বংস হওয়া পরিবেশ পুনরুদ্ধারে একটি আলাদা তহবিল গঠনের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধে কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক বরকত উল্লাহ মারুফ বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গার দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে গিয়ে উখিয়া উপজেলা দুটির ২১টি খাল ও ছড়া সম্পূর্ণ দূষিত হয়ে গেছে, যার ওপর কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে স্থানীয় মানুষ নির্ভরশীল। উখিয়ার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীরা শরণার্থীশিবির থেকে প্রতি মাসে ১০০ টন করে বিক্রয়যোগ্য বর্জ্য সংগ্রহ করছেন। কিন্তু প্লাস্টিকের প্যাকেট ও পলিথিনগুলো শিবিরে রয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান বলেন, বন মানেই কেবল কিছু গাছ নয়। বন মানে অনেকগুলো প্রাণ ও প্রতিবেশের সমাহার এবং একবার এই প্রতিবেশ হারিয়ে ফেললে তা গাছ লাগিয়ে পূরণ করা যায় না। তিনি বলেন, ‘আমরা কক্সবাজারে এখন একটি জরুরি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এবং সেখানে যে ধরনের উন্নয়ন উদ্যোগই গ্রহণ করা হোক না কেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় অধিবাসীদের হিসেবে ধরেই আমাদের এগোতে হবে।’
সিসিএনএফের সমন্বয়কারী ফজলুল কাদের চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, গত কয়েক দশক ধরে কক্সবাজারের ভূগর্ভস্থ পানি নগরায়ণ ও অতি পর্যটকের চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একুশ বছরে ভূ-উপরিস্থিত মিঠা পানির আধার ও জলাশয় হ্রাস পেয়েছে ৬৩ শতাংশ। অন্যদিকে আবাস ও নগরায়ণ বেড়েছে ২৪৬ শতাংশ। তিনি ভূ-উপরিস্থিত জলাধারের সংস্কার ও সমুদ্রের পানি থেকে লবণমুক্ত পানযোগ্য পানির প্ল্যান্ট বসানোর জন্য সুপারিশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করছে পলিথিনের আচ্ছাদনের নিচে। এই প্রচণ্ড গরমে প্লাস্টিক তাঁবুর মধ্যে থাকাটাই একটা দুর্যোগ এবং এ কারণে তারা ক্রমাগত অসুখে ভুগছে। তিনি ত্রাণ কার্যক্রমে তাদের বাসস্থান বিষয়টি সবার বিবেচনার জন্য তুলে ধরে বলেন, আরেকটু উন্নত বাসস্থান, ক্যাম্পে জন ঘনত্ব হ্রাস ও অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।