হাসপাতাল থেকে কারাগারে জি কে শামীম
ক্যাসিনো-কাণ্ডে গ্রেপ্তার বিতর্কিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে শামীমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। জি কে শামীম সুস্থ আছেন, হাসপাতাল থেকে এমন ছাড়পত্র দেওয়ার পর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
এর আগে কারা কর্তৃপক্ষ মোট ১২ বার চিঠি দিলেও বিতর্কিত এই ঠিকাদার প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতালেই ছিলেন। এ নিয়ে আজ প্রথম আলোতে ‘জি কে শামীমকে “ভিআইপি সেবা” হাসপাতালে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাঁকে আবার কারাগারে ফেরত পাঠানো হলো।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে কারাগারের যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের জানানো হয়েছে, জি কে শামীমের চিকিৎসা শেষ হয়েছে এবং ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এর আগে তিনি আদালতে যান, সেখান থেকে বেলা তিনটায় হাসপাতালে ফেরেন।
গত ৫ এপ্রিল ডান হাতের চিকিৎসার জন্য তাঁকে কেরানীগঞ্জে স্থাপিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসা শেষে দুই দিনের মধ্যে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর কথা ছিল।
এর আগে জি কে শামীমকে ফেরত পাঠানোর তাগাদা দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ মোট ১২ বার চিঠি দিলেও হাসপাতালেই ছিলেন তিনি। চিকিৎসার কথা বলে আট মাসের বেশি সময় ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ছিলেন। হাসপাতালের প্রিজন্স অ্যানেক্স ভবনের চারতলা ভবনের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে ছিলেন জি কে শামীম।
জি কে শামীমকে ফেরত পাঠাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সর্বশেষ ৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালককে (হাসপাতাল) চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী রোগীসহ সারা দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন ২০০ জন কারারক্ষী ও প্রধান কারারক্ষী নিয়োগ করতে হয়। এতে কারাগারে থাকা প্রায় ১০ হাজার ২৯৭ জন বন্দী ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২০ থেকে ২৫ জন বন্দীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারা প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ছাড়া বাইরের হাসপাতালে বন্দীদের চিকিৎসার বিষয়ে তদারকিসহ দ্রুত চিকিৎসা শেষে কারাগারে ফেরত আনতে বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। চিঠিতে দ্রুত জি কে শামীমকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।
গ্রেপ্তারের আগে জি কে শামীম কখনো নিজেকে যুবলীগের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতেন আবার কখনো পরিচয় দিতেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে। চলতেন সামনে-পেছনে সাতজন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের বড় কাজের প্রায় সবই ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠানের কবজায়। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ‘প্রেশার’, ‘ডায়াবেটিস’, বুকে ব্যথা’—এ রকম নানা রোগের কথা বলে হাসপাতালে থাকছিলেন জি কে শামীম। হাসপাতালে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন পাঁচজন কারারক্ষী ও চার পুলিশ।