রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও নিজের দুর্বলতা—দুই কারণেই স্বাধীনভাবে চলতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বাইরে খুব একটা যেতে দেখা যায় না কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক সব ক্ষেত্রেই সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রথমে মৃদু স্বরে আপত্তি জানালেও পরে ঠিকই সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।
পাশাপাশি গত সাত বছরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের শীতল সম্পর্ক। এতে ব্যাংক খাতে সুশাসন তথা দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা।
অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বেশি দেখা গেছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিকে যদি অফিসে নিয়ে আসা হয়, তাও আবার আর্থিক খাতে, আমি বলব এটা দুঃখজনক এবং অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ।’
অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা বিশ্বজুড়েই আলোচনার বিষয়। বলা হয়, বিশ্বে স্বাধীন ও আধুনিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শুরু ১৯৮৯ সালে, নিউজিল্যান্ডে। নিউজিল্যান্ডের গভর্নর নিয়োগ পান চুক্তির ভিত্তিতে। চুক্তির শর্ত পূরণ করতে না পারলে চাকরিচ্যুতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীন রাখার জন্য নানা ধরনের আইনকানুন করা হয়েছে। পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে জবাবদিহি করার জায়গাটি। বাংলাদেশে অনুপস্থিত দুটোই।
>শুধুই দলীয় বিবেচনায় রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকের পর্ষদে লোক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংক খাতের সুশাসনের জন্য বিপদ ডেকে আনা হয়েছে
সালেহউদ্দিন আহমেদ
সাবেক গভর্নর
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে একাধিক গবেষণা রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। সংস্থাটির সাবেক কর্মকর্তা, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজের মতো কাজ করতে পারছে না। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীন নয়। স্বাধীন না হওয়ারও কারণ আছে। সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। আর এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংককে জবাবদিহির মধ্যে আনা সম্ভব নয়। এ জন্য আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী ও স্বাধীন করতে হবে, তারপর জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কী কাজ: বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ অনুযায়ী, বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ ছয়টি। যেমন, মুদ্রানীতি প্রণয়ন, বৈদেশিক বিনিময় বাজারে হস্তক্ষেপের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতির আলোচনায় সরকারের অন্যান্য নীতির ওপর প্রভাব ও সমন্বয়ের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখা ও ব্যবস্থাপনা, নোট ইস্যু ও স্থিতিশীল বিনিময় হার ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং ব্যাংক কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরদারি ও তদারক করা।
তবে আধুনিক অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম মূল কাজ ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দ্য ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অবশ্য এর সঙ্গে বাড়তি আরেকটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। আর সেটি হলো উচ্চ কর্মসংস্থান সৃষ্টি। মূলত মূল্যস্তর স্থিতিশীল রাখা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ালে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি স্বস্তিতে থাকে বলে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন। এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কয়েক বছর ধরে নিয়মিতভাবে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। যদিও সরকারের ঘোষিত বাজেট ও রাজস্ব নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়েই সেটি করতে হয়। যেমন, এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি তৈরি হচ্ছে এই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই। তুলনামূলক এই উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না বাংলাদেশ ব্যাংককে। কারণ, সাধারণ বিচারে ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি যথেষ্ট বেশি বলেই মনে করা হয়। আর কর্মসংস্থানের সঠিক তথ্য দেশে কারও কাছেই নেই।
বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা এখন দুভাবে মূল্যায়ন করা হয়। যেমন, নীতি গ্রহণের স্বাধীনতা ও পরিচালনার স্বাধীনতা। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে মুদ্রানীতি তৈরি করতে পারে কি না এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে ব্যাংক খাত তদারক করতে পারে কি না। ১৯৯৪ সালে আইএমএফ এক গবেষণায় দেখায় যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত বেশি স্বাধীন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে তার সফলতাও তত বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদাহরণ দেওয়া হয় দ্য ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে নিয়ে। তারা ২০১২ সালে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের অংশ হিসেবে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। আর ২০১৫ সালে ঠিক করা হয়, বেকারত্বের হার রাখা হবে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে। এই দুই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই ফেডারেল রিজার্ভ তাদের ঋণনীতি তৈরি করে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ওয়েবসাইটে গেলেও দেখা যায়, সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশে রাখার কথা বলা আছে।
তবে কেবল লক্ষ্যস্থির নয়, তা পূরণ হলো কি না তার জবাবদিহিও করতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরপর কংগ্রেসের কাছে লক্ষ্য পূরণের সাফল্য-ব্যর্থতা জানাতে হয়। জবাবদিহি করতে হয় ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকেও। এমনকি পাশের দেশ ভারতকেও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদকে লক্ষ্য পূরণের রিপোর্ট দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহির কোনো জায়গা রাখা হয়নি। আইনেও কিছু বলা নেই।
এখানে কী হয়: আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদে সরাসরি দলীয় লোক নিয়োগ দেয়। অথচ সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক লিমিটেড কোম্পানি হয়ে যাওয়ার পর সরকার তা পারে না। ওই সময় ব্যাংকগুলোতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক নেতা, আওয়ামী লীগের জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতা, এমনকি স্কুলের শিক্ষকদের পর্যন্ত বসানো হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি।
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংকসহ নানা কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। আত্মসাৎ হয় অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকে সরকার মূলধন ঘাটতি পূরণ করার পর আবার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের অভাব প্রকট এবং পর্ষদ যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না। ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদিতে পর্ষদের সরাসরি হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তারের ঘটনা ঘটছে। বিষয়গুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আশু পদক্ষেপ দরকার।’ চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতেও বলেছিল।
আশু কেন, সুদূর পদক্ষেপও মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে দেখা যায়নি। বরং তখন অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পুরো মেয়াদই পূর্ণ করেন ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালকেরা। এরপর সোনালী ব্যাংকে কাজী বাহারুল ইসলাম, বেসিক ব্যাংকে আবদুল হাই বাচ্চুসহ অন্য ব্যাংকগুলোতেও চেয়ারম্যান-পরিচালকদের পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়, কাউকেই বদল করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ নিয়ে আর প্রশ্ন তোলেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, শুধুই দলীয় বিবেচনায় রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকের পর্ষদে লোক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংক খাতের সুশাসনের জন্য বিপদ ডেকে আনা হয়েছে। আবার কিছু কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেও দুর্বলতা দেখিয়েছে।
বেসিক ব্যাংক ও হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পরে দুই বছর ধরে সরকার রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর পরিচালক নিয়োগের ধরন পাল্টিয়েছে। এখন আর সরকার সরাসরি নিয়োগ দেয় না। বরং অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নাম পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র নিয়ে নিয়োগ দিতে বলে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকও অনাপত্তি দিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবদুল হামিদকে গত বছর তৃতীয়বারের মতো এমডি নিয়োগ দিতে ব্যাংকের পর্ষদকে চিঠি দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। একাধিক ঋণ কেলেঙ্কারিতে সৈয়দ আবদুল হামিদের যোগসাজশ থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক এতে সায় দেয়নি। মন্ত্রণালয় পরে কৌশলে তাঁকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত ছাড়াই। বাংলাদেশ ব্যাংকও তা মেনে নেয়।
এরপরে বাংলাদেশ ব্যাংক দুই মাস আগে আবদুল হামিদকে অপসারণের জন্য চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এখনো তাঁকে সরানো যায়নি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোষী থাকলে নিজের ক্ষমতাবলেই অগ্রণী ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমি নিশ্চিত নই নিজের দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক তা এখনো করেনি, না সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে করতে পারছে না।’
দুর্বলতা নিজেরও: ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১ সালে সরকার নতুন ব্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দেয়। মূলত দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের জন্যই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। শুরুতেই এ নিয়ে আপত্তি তোলে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৩১ ধারা অনুযায়ী নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়ে দেয় যে বাংলাদেশে নতুন করে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার দরকার নেই। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে এই বাংলাদেশ ব্যাংকই পরে উল্টো যুক্ত দিয়ে নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নেয়।
সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপত্তি জানানোর পরও সরকার যখন নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিতেই যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তখন শক্ত কোনো অবস্থান নেয়নি। স্বায়ত্তশাসন থাকলেই তো হবে না, যার স্বায়ত্তশাসন, তা বজায় রাখার দায়িত্বও তারই।
ব্যাংক তদারক কে করবে: পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তদারকি ও নজরদারির জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে ইউরোপের অনেক দেশে এই ব্যবস্থা রয়েছে। কেবল ইংল্যান্ডে আলাদা ব্যবস্থা করা হলেও ২০১৩ সালে ব্যাংক তদারকির কাজটি আবারও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের কাছে নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে মুদ্রানীতি প্রণয়নের বাইরে তদারকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলেও অনেক দেশই এ থেকে বেরিয়ে আসছে।
বর্তমানে লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ শুধু মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। ব্যাংক তদারকির কাজটি করে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান। আবার বেশির ভাগ দেশে ব্যাংক তদারকের দায়িত্ব সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থাকলেও সেখানে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় ব্যাংক তদারকের জন্য আলাদা পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে।
বাংলাদেশে করা হয়েছে এক অভিনব পদ্ধতি। ব্যাংক তদারকির কাজকে ভাগ করে দেওয়া হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংক নজরদারি ও তদারকির দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। অন্যদিকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো তদারকির জন্য ২০১০ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ে নতুন করে তৈরি করা হয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অথচ ১৯৯৪ সালে বিএনপি আমলে শুরু হওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ বিভাগটি ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই বাতিল করে দিয়েছিল।
এসব কারণে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক তদারকিতেই বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম বলেই মনে করা হয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এখানে প্রবল। আবার যতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাও চর্চা করে না তারা।
সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম মনে করেন, গোটা বিষয়টিই রাজনৈতিক এবং সমস্যাটা সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক—দুই দিক থেকেই। অর্থনীতির জন্যও তা ক্ষতিকর। তিনি বলেন, সরকারের চাওয়া পূরণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেমন কাজ করেছে, ব্যর্থ হয়েছে নিজের এখতিয়ারের মধ্যে থাকা কাজ করতেও।