কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের জেলা প্রধান শাখায় দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ঘটনার মূল নায়ক সোহেলের স্ত্রী মাহিমা বেগম ও ট্রাকচালকের সহকারী আলমগীরকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে কিশোরগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে গতকাল সোমবার বিকেলে এ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে পুলিশ।
শুনানিতে সরকারপক্ষে আদালত উপপরিদর্শক (সিএসআই) সুনীল সরকার জানান, রংপুরের পীরগঞ্জের বাসিন্দা গ্রেপ্তার হওয়া ট্রাকের সহকারী আলমগীর টাকার বস্তা দেখে ফেলার কারণে ইউসুফ ওরফে সোহেলকে চাপ দিয়ে সাত লাখ টাকা আদায় করেছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল পুলিশকে জানান। মাহিমার কাছ থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। মাহিমার সঙ্গে সোহেলের সাত বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর শেষ দুই বছর মাহিমা চোর সোহেলকে সুড়ঙ্গ পথ তৈরিতে মানসিক সহযোগিতা ও উত্সাহ জোগান। এ অবস্থায় সুড়ঙ্গ তৈরিতে অন্য কারও সহযোগিতা ছিল কি না, তা জানার জন্য মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মাহিমাকে ও বাকি টাকা উদ্ধারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সহকারী আলমগীরকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
শুনানি শেষে উন্মুক্ত আদালতে আদেশ না দিয়ে পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত কক্ষে (চেম্বারে) নথি পর্যালোচনা শেষে উভয়কে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানায়, লুট হওয়া ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার মধ্যে দুই দফায় র্যাব ও পুলিশ উদ্ধার করেছে ১৬ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৬৪ টাকা। ২২২ বস্তা চাল কেনা হয়েছিল। যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ১৬ কোটি ৩৪ লাখ ছয় হাজার ৬৪ টাকার একটি খসড়া হিসাব পুলিশের কাছে রয়েছে। রিমান্ডে থাকা সোহেল ও তাঁর ভাই ইদ্রিসের কাছে বাকি প্রায় ছয় লাখ টাকার হিসাব চাইছে পুলিশ। খরচ হয়ে থাকলে কীভাবে হয়েছে, তাও জানতে চাইছে তারা।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তরের হাইকোর্টের নির্দেশ থাকার পরও লিখিত আদেশটি জেলা পুলিশ এখনো পায়নি। তাই গতকাল পর্যন্ত র্যাবের কাছে মামলাটি হস্তান্তর হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক জানান, মামলার অগ্রগতি বেশ ভালো। টাকা লুট ও এর সঙ্গে অন্য কারা জড়িত ছিলেন, তা চিহ্নিত করার কাজটি বাকি ছিল।
গতকাল রাতে কাভার্ড ভ্যানচালক আবদুস সাত্তার তালুকদার, ভ্যানের সহকারী সালামত, ট্রাকচালক লালু মিয়া—এ তিনজন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামিদুল ইসলামের কাছে মামলার সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা চাল ও মালামাল ট্রাকে এবং ভ্যানে তোলাসহ কোথায়, কীভাবে নেওয়া হয়, তা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন। রিমান্ডে থাকা ব্যাংকের এমএলএসএস আবু বক্কর সিদ্দিককে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, হাইকোর্টের আদেশের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মামলাটি হস্তান্তরের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আদালতের আদেশ এখনো জেলা পুলিশ পায়নি। আদেশ পাওয়ামাত্র র্যাবের কাছে মামলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।
কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকে দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে চোরের দল ব্যাংকের স্ট্রং রুমের ভল্টে ঢুকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লুটে নিয়ে যায়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোববার ২৬ জানুয়ারি ব্যাংকে গিয়ে অর্থ লুটের ঘটনাটি বুঝতে পারেন। শাখাটির নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারার মধ্যে এই অভিনব ও দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে।