সিলেটের তারাপুর চা-বাগানে গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি

দখলমুক্ত হওয়ায় প্রায় ২৭ বছর পর গতকাল শুক্রবার সিলেট নগরের তারাপুর চা-বাগানে বিজয় দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। এ সময় সরকারের কাছে ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল চা-বাগানে পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো গণহত্যা ও ৪৩ জনকে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়।
দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হয় গণহত্যায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে তৈরি স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে। পরে বিজয় শোভাযাত্রা, ‘শহীদ পরিবারের মুখে গণহত্যার বর্ণনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও চা-পল্লির শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শেষ হয় উদ্যাপন। দিনব্যাপী আনুষ্ঠানিকতায় বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত ছাড়াও সিলেট সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমানসহ চা-পল্লির জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত বলেন, ‘তখন আমার বয়স ১৬-১৭ বছর হবে। একে একে বাবা, কাকা, ভাইদের ধরে এনে হত্যা করা হলো। হয়তো বয়সের কারণে বেঁচে গিয়েছিলাম আমি। আজ এত বছর পরও আমার বাবা-ভাই-কাকাসহ ৪৩ জন শহীদ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। এতকাল বাগান হাতছাড়া থাকায় এ দাবি জানানোরও সুযোগ পাইনি। আজ চা-শ্রমিকদের নিয়ে গণহত্যার শিকার পরিবারের একমাত্র বেঁচে যাওয়া একজন হিসেবে সরকারের কাছে এ দাবি জানালাম।’
১৯৮৮ সালে তারাপুর চা-বাগানের সেবায়েত থাকাকালে পঙ্কজ কুমার গুপ্ত বাগানে ঢোকার প্রধান রাস্তার মুখে গণহত্যা স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করেন। সেখানে গুপ্ত পরিবারের ৫ জনসহ ৪৩ জন শহীদের নাম রয়েছে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট নগরের পাঠানটুলার উপকণ্ঠে থাকা ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গার তারাপুর চা-বাগান গুপ্ত পরিবারের কাছ থেকে অবৈধভাবে বন্দোবস্ত নিয়ে দখল করেন শিল্পপতি রাগীব আলী। গত ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায়ে বাগান পুনরুদ্ধার হয়। ১৫ মে বাগানটি জেলা প্রশাসন সেবায়েত পঙ্কজকে বুঝিয়ে দেয়। জালিয়াতির মাধ্যমে চা-বাগান দখল ও সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুটি মামলা সিলেটের মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন। রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আবদুল হাই বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছেন।
পঙ্কজ কুমার গুপ্ত বলেন, ১৯৮৯ সালের দিকে বাগান দখলের তোড়জোড় শুরু হলে তিনি আর বিজয় দিবস উদ্যাপন করতে পারেননি। দীর্ঘ ২৭ বছরের মধ্যে ২০১২ সালে একবার বিজয় দিবসে একা একা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। এবার চা-শ্রমিক ও কর্মচারীদের নিয়ে ২৭ বছর পর বিজয় দিবস উদ্যাপিত হলো। তিনি বলেন, ‘এর আগে তো রাষ্ট্রব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষের ছিল না। তাই আমি এ গণহত্যা ও শহীদদের স্বীকৃতির দাবি জানাতে পারিনি। এরপর বাগানও হাতছাড়া হয়। এবার বাগানের সেবায়েত ফিরে পাওয়ায় সরকারের কাছে আমি এ দাবি জানিয়েছি।’