সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক প্রকৃতই একজন শ্রমিকবান্ধব নেতা ছিলেন। শ্রমিকেরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলভুক্ত হলেও তাঁদের রুটি-রুজির আন্দোলনকে তিনি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে ফেলতেন না। তিনি মনে করতেন, রুটি-রুজির আন্দোলন দলনির্বিশেষে সব শ্রমিকের অস্তিত্বের অন্দোলন। এই আন্দোলনে সব শ্রমিকের যেমন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, তেমনি সব রাজনৈতিক দলকেও এই অন্দোলনে সমর্থন দিতে হবে।
সাইফউদ্দিন মানিকের এই দৃষ্টিভঙ্গিই শ্রমিক আন্দোলনের নেতাদের আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করা উচিত। অন্যথায় শ্রমিকদের অধিকারের লড়াই ফলপ্রসূ হবে না। সাইফউদ্দিন মানিকের স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
রাজধানীর তোপখানা রোডে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিকের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী। সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সভায় টিইউসির সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিকের দর্শন ছিল শ্রমিকের রাজত্ব কায়েম করা। একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা হওয়া সত্ত্বেও শ্রমিকরাজ কায়েমের আন্দোলনকে তিনি দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রেখেছেন। এ কারণেই তখনকার শ্রমিক আন্দোলনে বিপুলসংখ্যক সাধারণ শ্রমিক সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। শ্রমিকদের আন্দোলনগুলো সফল হতো।
ওয়াজেদুল ইসলাম বলেন, ‘অধিকাংশ শ্রমিকনেতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লেজুড় হয়ে শ্রমিকদের স্বার্থের বদলে দলীয় স্বার্থে কাজ করেন। ফলে রাজনৈতিক আদর্শে বিভক্ত নেতাদের আন্দোলন সফল হচ্ছে না। এ জন্যই এখনো শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা করাতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।’
সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিকের স্ত্রী ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, রাজনীতি করে সেখান থেকে কিছু পাওয়ার আশা করলে দায়বদ্ধতা থাকে না। সাইফউদ্দিন মানিক কিছু পাওয়ার বা হওয়ার জন্য রাজনীতি করেননি। মৃত্যুশয্যায়ও তিনি দেশের মানুষের ঐক্য নিয়ে ভেবেছেন।
শ্রমিকনেতা লুৎফর রহমান সাইফউদ্দিন মানিকের স্মৃতিচারণা করেন। বর্তমান রাজনীতিতে সাইফউদ্দিন মানিকের পথ অনুসরণ করতে রাজনীতিবিদ ও শ্রমিকনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সভায় আরও বক্তব্য দেন শ্রমিকনেতা দেওয়ান মোহাম্মদ আলী, আসলাম খান, এ কে এম মাহাবুব আলম প্রমুখ।
সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক ২০০৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা, বাংলাদেশে শ্রমিক আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে ছিলেন তিনি।